সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বন্দর ব্যবসায়ী নেতারা

মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ

৪১ শতাংশ মাশুল (ট্যারিফ) বৃদ্ধির ইস্যুতে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী নেতাদের সমন্বয় সভা। ছবি : কালবেলা
৪১ শতাংশ মাশুল (ট্যারিফ) বৃদ্ধির ইস্যুতে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী নেতাদের সমন্বয় সভা। ছবি : কালবেলা

৪১ শতাংশ মাশুল (ট্যারিফ) বৃদ্ধি চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করার একটি ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে এটি স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী নেতারা। অন্যথায় এ পদক্ষেপ রোধের হুঁশিয়ারি দেন তারা। স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার পর সবার সম্মতিতে বন্দরের মাশুল নির্ধারণ করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরে অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে মহানগরীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী নেতাদের সমন্বয় সভায় তারা এসব কথা বলেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এসএম আবু তৈয়বের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন এশিয়ান গ্রুপের প্রধান এমএ সালাম।

সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমীরুল হক বলেন, ‘৪১ শতাংশ হারে ট্যারিফ বাড়িয়ে দেওয়া হলো। হঠাৎ এটা কেন? মোংলা বন্দরে তো বাড়েনি, পায়রায় তো বাড়েনি, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরে কেন? এই ট্যারিফ বাড়ানো একটা ষড়যন্ত্র। আমাদের বন্দরকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক আছে, তাহলে বন্দরে নেই কেন? যারা বন্দর ব্যবহার করে তাদের কথা শুনবে না, ট্যারিফ বাড়াবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের কেন ট্যারিফ বাড়াতে হবে? এটা তাদের কাজ?’

তিনি বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করছি, কচি খোকা নই। আমরা ব্যবসায়ী, আমরা বন্দর ব্যবহার করি, আমরা কারও গোলাম নই। আমার টাকায় বন্দর চলবে আর আমার কথা না শুনে ট্যারিফ বাড়িয়ে দেবে, আমরা কী কলুর বলদ? এ যে ট্যারিফ বাড়াল, এটার পেমেন্ট তো ব্যবসায়ীরা করবে না, জনগণকে করতে হবে। বন্দরকে কস্ট বেইজড ট্যারিফ করতে হবে।’

বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলাপের আগপর্যন্ত ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বন্দরকে হঠাৎ করে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বাড়াতে হবে কেন? এটা আমাদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তো এত জবাবদিহি নেই যে, তাদের বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর জন্য উঠে-পড়ে লাগতে হবে! ট্যারিফ বাড়ানোর জন্য কাদের এত বেশি আগ্রহ, তাদের শনাক্ত করতে হবে। বন্দর নিয়ে খেলা শুরু হয়েছে। এ খেলা খেলতে দেওয়া হবে না।’

পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি দুটোই করে। ভিয়েতনাম, ভারত, মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যয় বেশি। তারপর আবারও ট্যারিফ বাড়ানো হচ্ছে। সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসবে পোশাক শিল্পের ওপর। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় চট্টগ্রাম বন্দরকে কখনো লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে?’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ট্যারিফ বাড়ানোর বিরুদ্ধে। এটা বাড়াতে হলে জাতীয় সংসদ বাড়াবে। ট্যারিফ বাড়ানোর পর আমাদের প্রোডাকশন খরচ বেড়ে যাবে। পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, দাম বাড়বে। তখন এদেশের গার্মেন্টস থেকে বায়ার আর পোশাক কিনবে না। ভিয়েতনাম, ভারতে চলে যাবে বায়ার।’

বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এমএ সালাম বলেন, ‘বন্দর ব্যবসা করে না, সেবা দেয়। বন্দর লাভ করে। আমরাও চাই না বন্দর লস করুক। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে এটা ট্যারিফ বাড়ানোর সময় নয়। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে নেই। আমরা চাই না বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে আমাদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হয়। এক মাসের জন্য ট্যারিফ আদায় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এক মাস সময় শেষ হচ্ছে। আমরা চাই, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করুক, আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন বাড়তি ট্যারিফ আদায় করা না হয়।’

বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহসভাপতি এসএম আবু তৈয়বের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সহসভাপতি হাবিবুর রহমান বক্তব্য দেন।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘দেশে প্রধান বন্দর নদীনির্ভর। বন্দরের মাশুল বাড়ানো নিয়ে আমাদের ক্ষোভ আছে। আমরা বলেছি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়াতে। ১৯৮৬ সালে ডলার ছিল ৩০ টাকা। এখন ডলারের দাম চারগুণ বেড়েছে। শিপিং এজেন্ট ফ্রেইট বাড়িয়েছে। ৪১ শতাংশের মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ২০ ফুটের কনটেইনারে ১২-১৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে। আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ চাই, আমরা স্বনির্ভর দেশ গড়ে দেব।’

বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিপিং এজেন্ট ফি বাড়াবে। ভিয়েতনামের তিনগুণ খরচ হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। আজকের দিনে ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলার কোনো সংগঠন নেই। ব্যবসায়ী সমাজ বিচ্ছিন্ন, হতাশাগ্রস্ত। সরকারি আমলারা এখন চট্টগ্রাম চেম্বার চালাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতি, রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা সব জাহাজ, কনটেইনার ও কার্গো বিল নতুন রেট অনুযায়ী নেওয়া হবে এবং একইভাবে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিসহ সব বন্দর ব্যবহারকারী বর্ধিত হারে মাশুল পরিশোধ করবেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৫২টি খাতে মাশুল আদায় করা হয়। সেখান থেকে ২৩টি খাতে মাশুল বাড়ানো হয়েছে ৪১ শতাংশ হারে। এর আগে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বর্ধিত ট্যারিফ আদায়ের পরিপত্র জারি হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের তীব্র আপত্তির মুখে নৌপরিবহন উপদেষ্টার হস্তক্ষেপে সেটা এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের বিবৃতি

কক্সবাজার আদালতে বিচারকের মোবাইল-মানিব্যাগ চুরি

পাঠ্যপুস্তক ছাপার দায়িত্ব হস্তান্তর ‘মাথাব্যথায় মাথা কাটার মতো সিদ্ধান্ত’ : টিআইবি

বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ে ভারতকে হারাল অস্ট্রেলিয়া

মৌসুমি বায়ুসহ আগামী ৪ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা

এবার উপদেষ্টাদের নিয়ে মুখ খুললেন সামান্তা শারমিন

ঢাকায় আসছেন জাকির নায়েক

ছক্কা মেরে ইতিহাস গড়লেন স্মৃতি মান্ধানা!

উপদেষ্টা রিজওয়ানাকে এনসিপি নেতার হুঁশিয়ারি

১০

একটি দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় : কফিল উদ্দিন 

১১

চাকসু নির্বাচনে নতুন প্রত্যয়ে ছাত্রদল

১২

বন্দর ব্যবসায়ী নেতারা / মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ

১৩

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে ৬ হাজারের বেশি মতামত পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

১৪

জুলাইয়ের গাদ্দারদের সব রেকর্ড প্রকাশ করা হবে : মুনতাসির

১৫

যে ছয় ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছাড়তে রাজি নয় ইসরায়েল

১৬

ময়মনসিংহে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

১৭

ধানের শীষের বিজয় মানেই জনগণের মুক্তি : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

১৮

রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

১৯

বাবর আজমকে নিয়ে ধারাভাষ্যে রমিজ রাজার তির্যক মন্তব্য

২০
X