একটা সময়ে পাহাড়ের ঢালু জমিতে জন্ম নেওয়া লটকন ফল অবহেলায় নষ্ট হয়ে গাছের নিচে পড়ে থাকত। পাহাড়ের ঢালুতে আর খালের পাড়ে বনজ ফল লটকন চোখে পড়লেও সময়ের ব্যবধানে মানুষের কাছে দিনের পর দিন ব্যাপকহারে চাহিদা বেড়েছে টক-মিষ্টি স্বাদের এ ফলটির
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে দেশের সমতলের বিভিন্ন জেলাতেও লটকনের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।
আম-লিচুসহ অন্যান্য ফল চাষে পরিচর্যাসহ মোটা অঙ্কের পুঁজি লাগলেও লটকন ফলে কোনো পুঁজি বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। ফলে কম পরিশ্রমে অধিক আয়ের সুযোগ করে দিতে পারে লটকন ফল। পাহাড়ের মাটিতে যেকোনো ফলের বাম্পার ফলন হয়। ফলে পাহাড়ের মাটিতে অপার সম্ভাবনাময় অন্যতম ফল লটকন।
উপজেলার ব্যঙ্গমারা, সাপমারা, মোহাম্মদপুর, আটবাড়ি, বাইল্যাছড়িসহ মাটিরাঙ্গায় বিভিন্ন আনাচে-কানাচে এ ফলের গাছ রয়েছে। স্থানীয় বাঙালিদের লটকন ফলটি চাকমা ভাষায় পশ্চিমগুল, মারমা ভাষায় ক্যানাইজুসি ও ত্রিপুরা ভাষায় খুচমাই নামে পরিচিত।
মাটিরাঙ্গায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ হেক্টর জমিতে লটকন আবাদ করা হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯ হেক্টর জমিতে লটকন আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৩১ টন।
প্রতিবছর জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকতে শুরু করে লটকন। এ সময়ে বাজারেও আসতে শুরু করে উচ্চ ফলনশীল এ ফলটি।
সম্প্রতি মাটিরাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষে স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই। কম পরিশ্রম আর কম পুঁজিতে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় লটকন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন তারা। বাজারে প্রতি কেজি লটকন ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাটিরাঙ্গার নবীনগরে আলম মিয়া বলেন, পাহাড়ের ঢালুতে প্রায় আমার ৭০টি লটকন গাছ আছে। প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণ লটকন ধরেছে। প্রতিদিনই ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছে লটকন। এ বছর লটকনের দামও বেশ ভালো।
ব্যাঙমারা ও সাপমারা থেকে মাটিরাঙ্গা বাজারে লটকন বিক্রি করতে আসা ঝর্ণা ত্রিপুরা জানান, আমাদের নিজেদের লটকন গাছ আছে। গাছে প্রচুর লটকন ধরেছে। বাজারেও দাম ভালো। আশা করছি লটকন বিক্রি করে ভালো আয় করতে পারব।
লটকন ক্রয় করতে আসা আব্দুর রহিম বলেন, পরিবারের সদস্যরা লটকন খুবই পছন্দ করে। কিছু লটকন নিজের পরিবারের জন্য নেব আর কিছু বোনের বাড়িতে পাঠাব।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, বেশি পরিমাণে গাছপালা ও ছায়া থাকায় পাহাড়ি এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কম পুঁজি ও পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সবুজ আলী কালবেলাকে বলেন, পার্বত্য এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বাজারের এর চাহিদাও বেশি। উচ্চ ফলনশীল এ ফসল উৎপাদনে কৃষকদের আরও আগ্রহী করা প্রয়োজন।
মন্তব্য করুন