ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের কমফোর্ট কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হামিদের ফ্ল্যাটের সিন্দুক থেকে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার সাকিবুল হাসান শান্তর বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশে।
সাকিবুল হাসান শান্ত ঢাকার এইচএসসির ভর্তির কোচিং করতে গিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে মিনা হামিদ নামের এক মেয়ের সঙ্গে। যা নিয়ে ২০১৬ সালে মিনার বাবা-মা নিষেধ করতে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে চরহামকুড়িয়া গ্রামে শান্তর বাবা শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে সবকিছু জেনে শিক্ষক পিতা ছেলেকে দুরে থাকার নির্দেশ দেন। কিন্তু তারপরও প্রেম থেকে বিয়ের ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়াও ঘটেছে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা চুরির ঘটনা। আর রাজধানীতে চাঞ্চল্যকর ‘বাবার সিন্দুক থেকে এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা চুরি করে স্বামীকে দেন মেয়ে’ শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের হলে তা নিয়ে তাড়াশ উপজেলা এলাকায় টক অফ দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, সাকিবুল হাসান শান্ত শিক্ষক দম্পতির একমাত্র ছেলে। তার বাবা মো. রফিকুল ইসলাম নাদোসৈয়দপুর মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মা মোছা. শাহিনা খাতুন নাদোসৈয়দপুর বাজার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। আর ২০১৮ সালে ওই শিক্ষক দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ হলে মো. রফিকুল ইসলাম মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নের চরহামকুড়িয়া গ্রামে ও মোছা. শাহিনা খাতুন সগুনা ইউনিয়নের বিন্নাবাড়ি গ্রামে বসবাস করছেন।
সরেজমিনে রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরে উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের চরকুশাবাড়ি শান্ত’র মা শাহিনা খাতুনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে শুধুমাত্র শান্তর নানি মোছা. শরিফা বেগম আছেন।
তিনি জানান, তার মেয়ে শিক্ষক শাহিনা মামলা সংক্রান্ত কাজে সিরাজগঞ্জ শহরে গিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি আরো জানান, শান্ত’র বয়স আড়াই বছর। তখন থেকে তার বাবা-মার মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। যা নিয়ে মামলা মোকদ্দমা শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে তখন থেকে শান্ত মায়ের কাছেই থাকেন।
শান্তর মামী মরিয়ম পারভীন বলেন, শিক্ষক দম্পতির ননদের বিয়ের পরেই সংসারের টানপড়েন চলতে থাকে। এ কারণে বেশিরভাগ সময়ে তার ননদ একমাত্র ছেলেকে নানা বাড়িতে রেখেই বড় করছিলেন। তিনি আরও বলেন, শান্তর মা বেশিরভাগ সময় বিদ্যালয়ে থাকায় মামী হিসেবে শান্ত আমার কাছেই বেশি থাকতো এবং ছোটবেলায় আমার বুকের দুধও পান করেছে। আমার ভাগ্নে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও কুরআন পড়ে। সে চুরি করতেই পারে এটা বিশ্বাসযোগ্য না। হয়ত প্রেম ও বিয়ের কারণে আমার ভাগ্নেকে হয়ত বা ফাঁসানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
শান্তর মামা রুহুল আমিন জানান, আমার ভাগ্নে উপজেলার নাদোদৈয়দপুর জন কল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে জিপিএ-৪.১৭ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। পরে নাটোর কাদিরাবাদ স্যাপার কলেজ থেকে ৪.৪০ পেয়ে এইচএসসি পাস করে রাজশাহী কলেজে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তারপর সেখান থেকে ভর্তি বাতিল করে ঢাকার তিতুমীর কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর এর মাঝেই চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে আমার ভাগ্নে শান্ত। যা অস্বাভাবিক এবং অবাক করার মতো ঘটনা। কেননা আমরা ও এলাকার লোকজন শান্তকে সৎ ও সহজ সরল হিসেবেই জানি। তার মা সাধ্যের মধ্যে নিয়মিত খরচ পাঠিয়ে শান্তকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। আমার ভাগ্নের লোভ লালসা আছে এ কথা আমরা বিশ্বাস করি না।
প্রতিবেশী মোতাহার হোসেন বলেন, শান্তর টাকা চুরির খবর আমরা শুনছি। তবে শান্ত যে চোর না তার প্রমাণ হলো চোর হলে সে ওই টাকা ফেরত দিতে যেতো না। বরং পালিয়ে থাকতো।
শান্তর বাবা শিক্ষক মো.রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে চোর না। ও যথেষ্ট মেধাবীও। আমার ধারণা আমার ছেলে ঢাকার ভর্তির কোচিং করতে গিয়ে মিনা নামের এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। যা নিয়ে ২০১৬ সালে মিনার বাবা-মা বিষয়টি জানাতে ঢাকা থেকে আমার বাড়িতে আসেন। তারা আমার ছেলেকে তার মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছাড়তে বলে আমরাও ছেলেকে ওই মেয়ের সাথে সম্পর্ক না রাখার কথা বলেছিলাম। এরপর ২০১৮ সালে শান্তর মায়ের সাথে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ হলে বিষয়টি নিয়ে আমি আর কোনো খোঁজখবর নেইনি। তবে বর্তমানে পত্র-পত্রিকায় টাকা চুরির ঘটনা নিয়ে আমার ছেলে শান্তকে জড়িয়ে যা লেখালেখি হচ্ছে তা আমি মেনে নিতে পারছি না।
উল্লেখ্য, ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের কমফোর্ট কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হামিদের ফ্ল্যাটের সিন্দুক থেকে ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি হয়। পরে গত ৪ জুলাই হামিদ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করলে বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা কয়েক দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্য আলামত জব্দ করেন। পরে বাসার সব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদের একমাত্র মেয়ে মিনা হামিদকে তাদের সন্দেহ হয়। টানা চার দিন বাসায় গিয়ে পুলিশ নানা কৌশলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে মিনা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, তিনি সিন্দুকের তালা খুলে টাকা চুরি করেছেন। সেই টাকা তিনি স্বামী সাকিবুল হাসানের কাছে দিয়েছেন। তার তথ্য মতে সাকিবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মন্তব্য করুন