চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৪, ০১:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চাঁদপুরে অবৈধ ড্রেজারের রাজত্ব, ধ্বংসের দ্বারপ্রাপ্তে ইলিশের আবাসস্থল

চাঁদপুরে অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন। ছবি : কালবেলা
চাঁদপুরে অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন। ছবি : কালবেলা

আইনি তোয়াক্কা না করেই চাঁদপুরের নদীগুলোতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। তখন কিছু অবৈধ ড্রেজার জব্দ করা হলেও বালু উত্তোলন পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বছরের পর চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় শত শত ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ইলিশের আবাসস্থল ধ্বংসের মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইলিশ গবেষকরা ।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩ মাসে পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে ১৫টি অবৈধ ড্রেজার জব্দ করেছে নৌপুলিশ।

অনুসন্ধান বলছে, অবৈধ ড্রেজারের বালু উত্তোলনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদী। বালুখেকোরা হাইকোর্টে রিট দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ ড্রেজারে শত শতকোটি টাকার বালু তুলে বিক্রি করে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করছে।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের রাজস্ব বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুরে ৮টি বালুমহাল ছিল। তবে এসব জায়গার ইজারার ওপর ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন সময় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। আর এসব রিট ঘিরেই কিছু লোক শত শত ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করেছে। যার কারণে সরকার বছরের পর বছর রাজস্ব হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ড্রেজারে বালু কাটার জন্য আমাদের হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের জন্য ১৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকার যে বরাদ্দটি পেয়েছি তা যথেষ্ট নয়। তাই নতুন করে চাহিদাপত্র পাঠিয়ে বরাদ্দপ্রাপ্ত হলে আমরা জরিপ কাজ শুরু করব।

এদিকে চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক ইনচার্জ বশির খান বলেন, নদীতে যে ড্রেজারগুলো চলছে তার কয়েকটির রেজিস্ট্রেশন থাকলেও একটিরও রুট পারমিট নেই। কাজেই আমরা প্রায়ই তথ্য পেয়ে অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি।

চাঁদপুরের বিআইডব্লিউটির বন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হোসেন বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের জরিপ ও নকশা ছাড়া কেউই বালু তুলতে পারেন না। কিন্তু দেখা গেছে, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা’ আছে—এমন দাবি করে কেউ কেউ মেঘনার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে অবাধে বালু তুলছেন।

চাঁদপুরের সাবেক ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, ইলিশ এবং মাছের প্রতি দরদ থাকলে কখনোই অন্তত চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনায় ড্রেজার বসানোর মতো কাজ হত না। ড্রেজারের বালু উত্তোলনের কারণে পানিতে থাকা মাছের খাবার, ডিম সব ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ইলিশের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে এবং খাদ্য তন্ত্রে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ইলিশের জন্য চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনার মতো এমন স্পর্শকাতর নদীতে আর ইলিশ পাওয়া যাবে না।

অপরদিকে বছরের পর বছর ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে নদীতীরবর্তী এলাকাগুলো ভাঙনের মুখে পড়েছে। চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক চোকদার বলেন, অবৈধ ড্রেজারের বালু উত্তোলনের কারণে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর পাশে মাল কান্দি, চোকদার কান্দি, ঢালী কান্দিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের বসতভিটা ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক বছরের ভাঙনে একটি নবনির্মিত সাইক্লোন শেল্টার, কয়েকটি গণকবরস্থান, মসজিদ, ঈদগাহ ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

সরজমিনে দেখা যায়, অবৈধ ড্রেজারের যত্রতত্র নদীতে বালু উত্তোলনে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ এলাকা বিশেষ করে পুরানবাজারের হরিসভা ও এর আশপাশের এলাকা চরম হুমকিতে রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, আমরা এরইমধ্যেই ৮২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শহর রক্ষা বাঁধের স্থায়ী প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি। এতে প্রায় ৩ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার নদীতীরবর্তী এলাকা স্থায়ী বাঁধের আওতায় আসবে। যদিও লঞ্চঘাট হতে পুরানবাজারের রনাগোয়াল এলাকায় পূর্বের বরাদ্দে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান বিবেচনায় আমরা কিছু জিও ব্যাগভর্তি বালুর বস্তা ফেলে আপাতত কাজ করছি। বর্ষার পরেই মূল কাজ শুরু করা হবে।

এসব বিষয়ে ড্রেজারের মালিকরা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে নৌপুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের নৌপুলিশ গত ৩ মাসে বালুমহাল সংক্রান্ত ২২টি মামলা দায়ের করে। এ ছাড়া ১৫টি ড্রেজার আটকসহ ২০টি বাল্কহেড আটক ও ৮৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একরামুল ছিদ্দিক বলেন, গত ৩ মাসে প্রশাসনিকভাবে ১২টি অবৈধ ড্রেজারকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও এসব ড্রেজারের সঙ্গে জড়িত ৪৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

অবৈধ ড্রেজার প্রসঙ্গে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, এ জেলায় এখন ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার কোনো অনুমতি নেই। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ড্রেজার নদীতে পাওয়া গেলেই কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাকসু নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকবে ১০ সদস্যের কমিটি

উচ্চ আদালতকেও সংস্কার করতে হবে : আসিফ নজরুল

যবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ড সভা বানচাল চেষ্টার অভিযোগ

এক ও দুই কয়েন নিয়ে নতুন নির্দেশনা

নির্বাচন কমিশনের ‘দায়িত্বহীনতার’ জবাব দেওয়া উচিত : ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী

রিপনের মা-বাবাকে নিয়ে যা বললেন অভিনেত্রী চমক

বিএনপিতে যোগ দিলেন জামায়াতের ৩০ নেতাকর্মী

মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সব কিছুই ৩১ দফায় রয়েছে : কফিল উদ্দিন

খুব দ্রুতই পাস হচ্ছে জকসু আইন 

দেশে দক্ষমানব সম্পদ উন্নয়নে তাকামোল প্রকল্পের সফলতা

১০

স্থায়ী কমিটিতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল বিএনপি

১১

ভেজাল কয়েকশ বস্তা টিএসপি সার ধ্বংস

১২

ঢাকা-১৩ আসনে বিএনপি সমর্থিত জোটের প্রার্থী ববি হাজ্জাজ

১৩

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করল আরও দুই দেশ

১৪

আমি আয়নাঘরে ছিলাম : আমির হামজা

১৫

বিশ্ব সোরিয়াসিস দিবসে সোরিয়াসিস এওয়ারনেস ক্লাবরে সেমিনার

১৬

পাকিস্তান-আফগানিস্তান / ভোরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, সন্ধ্যায় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি

১৭

দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই : নীরব

১৮

অ্যাকশন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন মাহি

১৯

বৃষ্টি-তাপমাত্রা নিয়ে আগামী ৫ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

২০
X