তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৭:০৯ এএম
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৭:১০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা পকেটে ঢোকালেন আ.লীগ নেতা

মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হাবিলুর রহমান হাবিব। ছবি : সংগৃহীত
মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হাবিলুর রহমান হাবিব। ছবি : সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হাবিলুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।

উন্নয়ন কাজের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ও একই জায়গায় বার বার প্রকল্প দিয়ে অভিনব কায়দায় অর্থ আত্মসাৎ, ভূমিহীন পরিবার উচ্ছেদ করে সরকারি পুকুর দখল, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দের কাজ না করেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিলুর রহমান হাবিব ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে কোনো কোনো প্রকল্পে বরাদ্দকৃত টিআরের অর্থের পুরোটা আবার কোনোটার মাত্র ২০ থেকে ৩০ ভাগ কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের টিআর, কাবিটা ও কাবিখা সাধারণ কর্মসূচির আওতায় মাধাইনগর ইউনিয়নের সরাপপুর পাকা রাস্তা থেকে আসাবের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে ওই গ্রামের আব্দুল হাকিম নামের এক ব্যক্তি পুকুর খনন করার সময় তার নিজের সুবিধার জন্য সামান্য মাটি দিয়ে ড্রাম ট্রাক চলাচলের উপযোগী করেন। কিন্তু সেখানে চেয়ারম্যান ওই রাস্তায় আবারও সরাপপুর তালেবের জমি থেকে আসাবের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৬ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেখানে আর কোনো কাজ হয়নি। বরাদ্দকৃত টাকা পুরোটাই তার পকেটে তোলেন।

স্থানীয় আব্দুল হাকিম, পলি খাতুন, লিজা খাতুন বলেন, এ সব রাস্তায় যে প্রকল্প আছে তা আমরা জানি না। বরং আমাদের টাকায় আমরা রাস্তায় মাটি দিয়েছি।

এদিকে বেত্রাশীন আফসারের বাড়ি থেকে কামালের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের ১ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও কোনো কাজ করেননি। বরং গ্রামবাসীর কাছে থেকে ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে চেয়ারম্যান নাম মাত্র মাটি ফেলেন। আর অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই চেয়ারম্যানের রোষানলে পড়তে হয় বলে অভিযোগ করেন আব্দুল মোমিন।

অপরদিকে চেয়ারম্যানের নিজ গ্রাম কাস্তা উত্তরপাড়া জামে মসজিদের অজুখানা নির্মাণ বাবদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও নির্মাণ না করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

তবে মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. ইউনুস আলী বলেন, আমাদের মসজিদে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে একটি মোটর, কিছু ইট ও পানির ট্যাংক দিয়েছেন। অজুখানা নির্মাণের বিষয়টি আমার জানা নেই।

শুধু তাই নয় চেয়ারম্যান মো. হাবিলুর রহমান হাবিবের স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে মো. বাছের আলী নামে এক ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করে সরকারি কোশাইগাড়ী নামক একটি পুকুর দখল করেন। সে পুকুরে তার নিজের যাতাযাতের জন্য কাগজ-কলমে কয়েকটি প্রকল্প দেন। আবার ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে কাস্তা আড়ংগাইল পাকারাস্তা থেকে কোশাইগাড়ি অভিমুখে বকারের জমি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। আবারও বকারের জমি থেকে কোশাইগাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ২ লাখ ১২ হাজার ৮৭১ টাকা বরাদ্দ দিয়ে অর্থ লোপাট করেন। অথচ কোশাইগাড়ি পুকুর খনন করে ওই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও এর আগে এলজিএসপি, ৪০ দিনের কর্মসূচি, উন্নয়নমূলক কাজে অর্থ লোপাট, দরিদ্রদের মাঝে ভিজিডির কার্ড দেওয়ার নামে অর্থ আদায় ও ইউপি সদস্য এবং সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে অসদাচারণের অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে ওই ইউনিয়নের ৯ জন নির্বাচিত ইউপি সদস্য (২০২২ সালের ২২ জুন) তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হাবিলুর রহমান হাবিব বলেন, আমি আগে পরে কম বেশি প্রকল্পের কাজ করেছি। এ ছাড়াও বিভিন্ন অফিসসহ অন্যান্যদের ম্যানেজ করার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) ১০ শতাংশ ঘুষ দিয়েছি।

তবে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তাড়াশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ লতিফ বলেন, খোঁজখবর নিয়ে কোনো প্রকল্পে অনিয়ম হলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, আমি প্রকল্পগুলো না দেখে কিছু বলতে পারব না। তবে বিল দেওয়ার আগে আমি দুই তিনটা প্রকল্প দেখেছি এবং সেগুলোর বিল দেওয়া হয়েছে। আর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) প্রকল্পগুলো শতভাগ দেখে বিল ছাড়ার কথা। তারপরও খোঁজ নিয়ে কোনো প্রকল্পে অনিয়ম হলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ মুঠোফোনে বলেন, আমার সংসদীয় আসনে উন্নয়ন কাজের জন্য আসা গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্পের কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করার কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়াও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) নির্দেশ দেওয়া আছে, কাজ না করলে কোনো বিল ছাড়া হবে না। আমার আসনে কেউ অনিয়ম দুর্নীতি করে ছাড় পাবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আ.লীগ নেতার বাড়িতে ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৬

১৬ জেলায় অতি ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস

বিএনপির নতুন ক্যাম্পেইন / ‘ইন্টেরিম রিমেম্বার, ইলেকশন ইন ডিসেম্বর’ 

তারেক রহমান সব মামলায় খালাস পাওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ ইউট্যাবের 

বিবাহবার্ষিকীতে কপাল খুলল দম্পতির, পেলেন ২৩ কোটি টাকা

ব্যবসায়ীর পিকআপভ্যান আটকে ‘চাঁদা’ নিলেন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা

ঘরে ঢুকে নারীকে গলাকেটে পুকুরে ফেলল মরদেহ

সাগরে নিম্নচাপ, বৃষ্টি থাকবে আরও দুদিন

চাকরি দিচ্ছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, আবেদন করবেন যেভাবে

ট্রাম্পের পাশে থাকা মাস্ক অবশেষে সরে দাঁড়ালেন

১০

চিফ ইঞ্জিনিয়ারের পরিকল্পনায় মোংলা বন্দরে জাহাজে ডাকাতি

১১

আজ থেকে দেশের সব সোনার দোকান বন্ধ

১২

সকাল থেকে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি

১৩

কেউ নিরাপদ থাকবে না, ইসরায়েলকে ইয়েমেনি বিদ্রোহীরা

১৪

বিনা টেন্ডারে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ

১৫

সাভারে ছাত্রদলের কমিটিতে বিবাহিত ও ছাত্রলীগ কর্মী

১৬

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা

১৭

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার : প্রধান উপদেষ্টা

১৮

সকালে খালি পেটে এক মুঠো কাঁচা ছোলা কী কী উপকার করে

১৯

কে এই মোহাম্মদ সিনওয়ার, যাকে হত্যার দাবি করছে ইসরায়েল

২০
X