শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১১:১৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার নৌকাশিল্প

বুড়ির হাটে নৌকা বিক্রির জন্য ক্রেতার অপেক্ষায় কারিগররা। ছবি : কালবেলা
বুড়ির হাটে নৌকা বিক্রির জন্য ক্রেতার অপেক্ষায় কারিগররা। ছবি : কালবেলা

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। প্রাচীনকাল থেকে এ দেশের যোগাযোগে নৌকাই একমাত্র মাধ্যম ছিল। বিশেষ করে প্রাচীন কালের যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কৃষকের কৃষি কাজের একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। তবে আধুনিক সভ্যতায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী উন্নয়নের কারণে ও খাল-বিল, নদী-নালা ভরাট এবং কৃষি জমিকে একের পর এক মাছের ঘের করায় নৌকাশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।

তবে হারিয়ে যেতে যেতে যেন কোনোরকম টিকে আছে আমাদের শরীয়তপুরের ৩০০ বছরের পুরোনো এ নৌকা শিল্প। তবে এ অঞ্চলের বেশিরভাগ নৌকা তৈরির কারিগররা জানান, তাদের এ পেশায় এখন আর আগামী প্রজন্মকে জড়াতে চান না। কারণ হিসেবে বলছেন, নৌকা ব্যবসায় আগের মতো লাভ নেই।

শরীয়তপুরের প্রাচীনতম নৌকার হাট সদর উপজেলার বুরির বাজার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৩০/৪০টি নৌকা নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। মাত্র ৪/৫ জন দরদাম করছেন।

স্থানীয় নৌকার কারিগর রনি মৃধা কালবেলাকে বলেন, ছোট আকারের একটা নৌকা তৈরি করতে ৫/৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু হাটে নিয়ে এলে সে নৌকা ৫-৬ হাজার টাকা বিক্রি করতেও হিমশিম খেতে হয়। আমাদের বর্তমান প্রজন্ম এ শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এখন আর কেউ এ পেশায় থাকছে না। আগামী দিনগুলোতে নৌকাশিল্প হারিয়ে যাবে।

হাটে নৌকা বিক্রি করতে আসা গোপাল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, একসময় আমাদের পাটানিগাঁও গ্রামের প্রতিটি ঘরে নৌকার মিস্ত্রি ছিল। সারা বছর তারা নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকত। এ নৌকা তৈরির করে সুখে শান্তিতে আমাদের দিন কাটত। বর্তমানে রাস্তা-ঘাট তৈরি হওয়ায় এবং কৃষি জমিগুলোতে মাছের ঘের করায় দিন দিন আমাদের নৌকার চাহিদা কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া নৌকা তৈরির খরচ বাড়লেও নৌকার দাম বাড়েনি। তাই আমরা ইচ্ছে করেই বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছি।

ইন্দ্রজিত বালা বলেন, দিন দিন নৌকার চাহিদা কমার কারণে বছরের তিন মাস নৌকা তৈরির কাজ করি। আর বাকি নয় মাস বাড়ি বাড়ি ঘুরে মানুষের ঘর তৈরি ও মেরামতের কাজ করি। এ ছাড়া একটা নৌকা তৈরি করতে ৫-৭ হাজার টাকা লাগে। এ টাকা জোগাড় করতে না পেরে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে কাজ করি। নৌকা বিক্রি করে যতটুকু লাভ করি সেই টাকা মহাজনকে দিয়ে দিতে হয়। তাই চিন্তা করছি আগামীতে আর নৌকা তৈরির কাজ করব না।

হাটের ইজারাদার মো. সাকিব হাসান বলেন, লাভের আশায় ১০ লাখ টাকায় হাটের ডাক কিনি। বর্তমান বাজারের যে অবস্থা তাতে করে লাভ থাকবে তো দূরের কথা চালান উঠানোই কষ্ট হয়ে যাবে। আগে যেখানে প্রতি হাটে ৯০/১০০টি নৌকা বিক্রি হতো, বর্তমানে সেখানে ২০/২৫টি বিক্রি হয়। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে কেউ আর নৌকার হাটের ডাক ধরবে না।

সদর উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তি নুরুল ইসলাম বেপারি বলেন, প্রায় ৩০০ বছর ধরে নৌকার হাট বসছে সদর উপজেলার বুড়িরহাটে। এই হাটটি জেলার সবচেয়ে বড় নৌকার হাট হিসেবেই পরিচিত। এখন এ হাটে তেমন বিক্রি হয় না। অভাবের কারণে নৌকা তৈরির কারিগররা এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

জেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কবি সুপান্থ মিজান বলেন, এক সময় ছিল যখন জেলার বাইরে থেকে অনেকে বড় বড় পাল তোলা মালবাহী নৌকা ভাড়া করে বুড়িরহাটে আসত। তারা এসব নৌকায় করে ছোট ছোট নৌকা কিনে বরিশালসহ দেশের অনেক এলাকায় নিয়ে যেত। বুড়িরহাটের সেই ঐতিহ্যে ভাটা পড়েছে। তবে এখনো হাটটি কোনোরকম টিকে রয়েছে। তবে কালের বিবর্তনে পাল তোলা মালবাহী নৌকা না এলেও সড়কে চলা বিভিন্ন যানবাহনে করে এখনো দূর-দূরান্তের কিছু ক্রেতা এসে নৌকা কিনে নিয়ে যান।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাঈনউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমরা এ প্রাচীনতম শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য সদা প্রস্তুত। নৌকা তৈরির কারিগররা যদি ক্ষুদ্র দল গঠন করে আমাদের কাছে আসে, তাহলে আমরা পল্লীসঞ্চয় ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে পারব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কলম্বোতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ফিরেছেন মিরাজ

বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে হাওরে হাউসবোট দখলের অভিযোগ 

বৃহস্পতিবার শুরু এইচএসসি, অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

অতর্কিত হামলায় ইসরায়েলের ৭ সেনা নিহত

দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন ওএসডি

লাল ডিম না সাদা ডিম, কোনটির পুষ্টিগুণ বেশি

ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে দুটি সংবাদমাধ্যম, ট্রাম্পের ক্ষোভ

মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন / বাঙ্কার বাস্টারেও ধ্বংস হয়নি ইরানের পরমাণু কেন্দ্র

ইরানে ফের হামলার চেষ্টা, ইসরায়েলি ড্রোন ভূপাতিত

রাজশাহী মহানগরীর থানা-ওয়ার্ড যুবদলের কমিটি গঠনে সতর্ক চিঠি

১০

ভুল রক্ত পুশ করায় মৃত্যুর মুখে রোগী, পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

১১

একযোগে ৩৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা

১২

চিনি খেলে কি ডায়াবেটিস হয়? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা 

১৩

খামেনির বিপদ কাটেনি, সামাল দিতে হবে নিজ জাতির ক্ষোভ

১৪

ইরানে যুদ্ধের অবসান : তেহরানের বর্তমান পরিস্থিতি

১৫

মাঝ নদীতে ভাসছিল ৪০ যাত্রীসহ ট্রলার, এরপর যা ঘটল

১৬

বিএনপিতে দখলবাজ নেতাকর্মীর স্থান নেই : মিফতাহ্ সিদ্দিকী

১৭

সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম

১৮

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের নতুন বার্তা

১৯

২৫ জুন : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২০
X