ঘরে শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবা। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে বাড়ি ছেড়ে ঢাকার আশুলিয়ায় একটি গার্মেন্টেসে চাকরি নেন সুজন হোসেন। তিন বোন ও বাবা-মা নিয়ে সুজনের সংসার। পরিবাবের ছয় সদস্যের অভাবী সংসারের হাল ধরেছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে সুজন। তাদের ভরণপোষণ চলত সুজনের উপার্জনের টাকায়। বিয়েও দিয়েছেন দুই বোনের।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিজয় মিছিলে যোগ দিতে গিয়ে গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে আহত হলে সহযোদ্ধারা তাকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন গত ৬ আগস্ট শহীদ সুজন হোসেনের লাশ তার নিজ গ্রামে নেওয়া হলে এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। ওইদিন বাদ আসর জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়। তার মৃত্যু মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে এলাকার মানুষের।
শহীদ সুজন হোসেনের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী গ্রামে। সহিদুল ইসলাম ও রিজিয়া বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে সুজন। একমাত্র উপার্জনক্ষম সুজন হোসেনের এমন মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে।
সুজনের বাবা সহিদুল ইসলাম বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী বাবা সহিদুল ইসলাম বর্তমানে উপার্জনে অক্ষম হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। পাঁচজনের অভাবী সংসারের হাল ধরা একমাত্র ছেলে কলিজা ছেঁড়া ধন নির্মমভাবে গুলিতে নিহত হলো। এখন সংসার চলবে কীভাবে।
স্থানীয়রা জানান, ৬ আগস্ট সুজনের মরদেহ বাড়িতে আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তার পরিবারের বাকি সদস্যরা। কম বয়সে সংসারের হাল ধরে দুই বোনের বিয়েও দিয়েছেন সুজন। বাড়িতে রয়েছে তার আরও একটি ছোট বোন। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় এক বোন তার সন্তানসহ ফিরে এসেছেন বাবার বাড়িতে। হতবিহ্বল মা-বাবা ও বোনদের পাশে স্থানীয় বিত্তশালী ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। দেশের দায়িত্ব দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও স্থানীয় বিত্তশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেলে কিছুটা হলেও কষ্ট কমবে পরিবারটির। এ অবস্থায় পরিবারটির জন্য সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি ও সরকারি সহায়তার বিশেষ প্রয়োজন। কিন্তু অসচ্ছল পরিবারটির পাশে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা দল পাশে দাঁড়ায়নি বলে জানান প্রতিবেশীরা। আর শহীদ সুজন হোসেনের শহীদি মর্যাদার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মন্তব্য করুন