ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০১:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিতে চোখ হারাল নাহিদ

গুলিতে আহত নাহিদ । ছবি : কালবেলা
গুলিতে আহত নাহিদ । ছবি : কালবেলা

গত ৫ আগস্ট (সোমবার) শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে দুর্বৃত্তদের চালানো গুলিতে আহত হন ফেনীর ছাগলনাইয়া সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. নাহিদুর রহমান। তিনি জানান, 'স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, আমার অন্তরে সুখ আছে কিন্তু চোখে দেখতে পারছি না।’

তিনি আরও বলেন, ৪ আগস্ট শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এ সময় তিনি ফেনীর মহিপালে সার্কিট হাউস রোডে অন্তত চারজনকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। অসংখ্য আহত ছাত্রকে উদ্ধার করে হাসপাতালেও পাঠান তিনি। এরপর থেকে ফেনী ছিল নিস্তব্ধ। কিন্তু ৫ তারিখ দুপুরে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে শুনে বিজয় মিছিল নিয়ে শহরের দিকে যায় ফেনীবাসী। মিছিলটি খেজুর চত্বরে গেলে লাভ মার্কেটের দিক থেকে হেলমেট পরা ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে সবার আগেই গুলিবিদ্ধ হন নাহিদ।

এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি মিছিলের সামনে ছিলাম। আমার হাতে একটি পতাকা ছিল। হঠাৎ করে হেলমেট পরা ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী গুলি চালানো শুরু করে। প্রথম গুলিটা আমার চোখে লাগে। আমি আর কিছু দেখছিলাম না। আমি চোখে হাত দিয়ে বসে পড়ি। তখন তারা আমার সারা গায়ে গুলি করে।’

নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে নাহিদ বলেন, ‘আমি পরিবারের বড় ছেলে। আমার ওপর অনেক দায়িত্ব। এতদিন পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটখাটো কাজও করতাম। এখন আমার চোখ ভালো হবে কিনা ডাক্তাররা কিছুই বলতে পারছেন না। আমার স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করব। কিন্তু আমি এক চোখ দিয়ে কিছু করতে পারব কিনা জানি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আন্দোলন শুরু করেছি, আমরা এই বাংলাদেশে বৈষম্য চাই না। এই স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। আমার অন্তরে সুখ আছে কিন্তু আমার চোখ দিয়ে আমি আমার সুন্দর দেশটাকে দেখতে পাচ্ছি না। এটা আসলে আমার ভেতরের অনেক কষ্ট থেকে বলছি যে, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। যেদিন আমি সুখ করব, আনন্দ করব ওইদিন আমার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দৌড়াতে হয়েছে চট্টগ্রামের দিকে। আমার বাবা-মা-ছোট ভাই সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে। এমন স্বৈরাচার আর কখনো চাই না। আমি চাই কোনো দেশে এমন স্বৈরাচার না আসুক।’

নাহিদের বাবা মো. বাহার মিয়া একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। যেই বড় ছেলে পরিবারের হাল ধরবে ভেবে তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন সে এখন চোখ হারানোর শঙ্কায়। চিকিৎসা ব্যয় বহনের সাধ্যও নেই তার। যা চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত করে দিয়েছে নাহিদের বাবাকে।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি ছোট একটা ফার্মে চাকরি করি। আশা ছিল বড় ছেলে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু সে তো নিজেই আশঙ্কাজনক অবস্থায়। চোখটা যদি ভালো হয় তাহলে অন্তত সে কিছু করে খেতে পারবে। এ জন্য তাকে নিয়ে বড় হাসপাতালে এসেছি। দেখি আল্লাহ তার কপালে কি রেখেছে।

যে কোনো মূল্যে নাহিদ তার চোখ ফিরে পাবে সেটাই এখন একমাত্র চাওয়া এই পরিবারের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

থানা ব্যারাকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ, তিনজন ক্লোজড

পিআর পদ্ধতিতে সব ভোটারের মূল্যায়ন হয় : চরমোনাই পীর

তিস্তায় কার্টুন বক্সে ভাসছিল নবজাতকের মরদেহ

দেশের উন্নয়নে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে : চসিক মেয়র

কৃষক দল সম্পাদক বাবুলের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল

চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সতর্কবার্তা / ‘সাংবাদিকরা চুপ থাকলে সমাজ অন্ধকারে ডুবে যাবে’

১০

যেসব অনিয়মে বাতিল হবে এজেন্সির নিবন্ধন

১১

অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে সিলেট জেলা পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ : পুলিশ সুপার

১২

বগুড়ায় সাহিত্য উৎসব শুক্রবার, অংশ নিবে দুই শতাধিক কবি

১৩

বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি রোধে নতুন নির্দেশনা

১৪

জুলাই শহীদদের স্মরণে জবিতে গ্রিন ভয়েসের বৃক্ষরোপণ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন

১৫

মার্কিন বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানে রুশ হামলা

১৬

মালয়েশিয়ার পর চীন সফরে যাবেন নাহিদ

১৭

৩১ দফাই হচ্ছে আমাদের জাতীয় সনদ : সুব্রত চৌধুরী

১৮

টিসিবির নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাকচাপায় বৃদ্ধ নিহত

১৯

ইতালির প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর বাতিল

২০
X