কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে শত শত কৃষকের মাথায় পড়েছে হাত। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা পড়েছেন বেকায়দায়। অবিরাম বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪ হাজার একশ কৃষক। এতে প্রায় সাত কোটি টাকার মতো কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাসিম হোসেন।
গত কদিন ধরে গ্রামীণ জনপদ থেকে বানের পানি নামতে শুরু করেছে। এতে রাস্তাঘাট ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা যাচ্ছে। বন্যায় গ্রামীণ জনপদের পাশাপাশি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে কৃষি অফিস জানায়, চকরিয়ার একটি পৌরসভাসহ ১৮টি ইউনিয়নে কৃষক রয়েছেন ৪ হাজার একশ। চলতি মৌসুমে ১০ হাজার একশ হেক্টর জমিতে আমন ফসল আবাদ হয়েছে। বন্যায় আমনের আংশিক ক্ষতি ১ হাজার ৩শ হেক্টর আর সম্পূর্ণ ক্ষতি ২২৩ হেক্টর। আমনের বীজ তলা ১৩৯ হেক্টর আংশিক ক্ষতি, সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ৮৩ হেক্টর। এদিকে আউশ ধানের আংশিক ক্ষতি ৪শ হেক্টর, ৮২ হেক্টর সম্পূর্ণ ক্ষতি। শাক-সবজি ২৬৯ হেক্টর ও ১৯ হেক্টর সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে প্রায় ৭ কোটি টাকার মতো কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বর্ষার শেষ সময়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জমিতে চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, অসহায় কৃষকদের মাথায় হাত পড়েছে। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা আমরা পাইনি।
জানা গেছে, উপজেলায় ১৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমি চাষের আওতায় রয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১০ হাজার ১শ হেক্টরের অধিক জমি চাষের আওতায় এসেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয় অর্ধেকের চেয়েও বেশি।
সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে মো. ফকির, বেলাল ও কামাল হোসেন কালবেলাকে বলেন, বন্যায় আমাদের বিলের ফসল শেষ হয়ে গেছে। কারও পাঁচ কানি, ১০ কানি ও ২ একর জমি আছে। এভাবে এ ইউনিয়নে শত শত হেক্টর জমিতে কৃষকের চাষ রয়েছে। পানি সম্পূর্ণ নেমে যায়নি। এখন ধীরে ধীরে নামছে, তবে এখনো রয়ে গেছে। ফসলের মাঠ পানির নিচে। ধানের চারা রোপণ করেছি কোনো মতে। এবারে আর বাকি থাকবে না, সব শেষ। এর আগেও আরেকবার বন্যা হয়েছে। সরকারি হিসেবে যে পরিমাণ ক্ষতি দেখানো হয়েছে বেসরকারিভাবে তার চেয়ে আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে ।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বেশ কিছু নিচু এলাকা এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ডুবে যাওয়া ফসল সম্পূর্ণরূপে ভেসে ওঠেনি। কিছু কিছু এলাকার রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ দৃশ্যমান হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাসিম হোসেন জানান, এ বছর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৫শ হেক্টর। তবে ১০ হাজার ১শ হেক্টর জমি চাষের আওতায় রয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে আরও আবাদ হবে। দ্রুত কৃষকদের প্রণোদনা শাকসবজি, আমনের বীজ ও আগাম সবজির বীজের সহায়তা দেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
চকরিয়া উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম কালবেলাকে বলেন, বন্যায় উপজেলায় রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এখনো সঠিকভাবে তা নিরূপণ করা যায়নি। স্থানীয় চেয়ারম্যানরা এ রিপোর্ট জানাবে।
মন্তব্য করুন