নিখোঁজের দুই মাস পর আশুলিয়ায় বসত বাড়ির আঙ্গিনা থেকে রেহেনা পারভিন (৩৭) নামের এক নারীর অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অপহরণ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করতে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে আশুলিয়ার মনোদিয়া চৌরাপাড়ার একটি বাড়ি থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক রেহেনার লাশটি উদ্ধার হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অপহরণ করে হত্যার পর মরদেহ মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় ওই নারীর ননদ পাপিয়া আক্তারসহ (৩৬) দুই জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও, হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নিহতের স্বামী আওলাদ হোসেন অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গেছেন।
এদিন সন্ধ্যায় চৌরাপাড়াস্থ পাপিয়ার নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশের দলটি। এর আগে রেহেনার মা গত ৮ সেপ্টেম্বর নবাবগঞ্জ থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখ একটি অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। রেহেনা ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার পাতিল গ্রামের লেহাজ উদ্দিনের মেয়ে। তিনি স্বামী আওলাদ হোসেন ও পাঁচ ছেলে মেয়ে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করতেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- নিহতের স্বামী আওলাদ হোসেন (৪৭), সে একই গ্রামের মৃত আ. মান্নানের ছেলে। একই থানার ছোট রাজপাড়া গ্রামের মৃত জহুর উদ্দিনের ছেলে আমজাদ হোসেন (৬৪), তিনি নিহতের চাচা শ্বশুর। নিহতের ননদ পাপিয়া আক্তার। অপরজন হলেন মাকসুদা। এদের মধ্যে আমজাদ ও পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এজাহার থেকে জানা যায়, রেহেনা গত ২ঌ জুন তার ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে আসে। এর পরেরদিন সে তার বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি চলে যায়। গত ৩ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে নিহতের মাকে ফোন করে বলে তাকে মারধর করা হয়েছে। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল নিয়ে গেছে। এরপর থেকে খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তার। পরে অস্ট্রেলিয়ান অ্যাম্বাসি রেহেনার পরিবারকে অবগত করেন। এর মধ্যেই রেহেনার স্বামী আওলাদ ১৩ জুলাই অস্ট্রেলিয়া চলে যান বলে জানতে পারে পরিবার। পরে তারা ৪ জনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন ও অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
নিহতের মা আইরিন আক্তার বলেন, আমার মেয়েকে অনেক কষ্টে লেখাপড়া করিয়েছি। পরে তাকে অস্ট্রেলিয়া পাঠাই। সেখানে সে নাগরিকত্ব পায়। পরে আওলাদ হোসেন এক পর্যায়ে জোরজবরদস্তি করে বিয়ে করে আমার মেয়েকে। অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালীন আমার মেয়ের অনেক সম্পদ হয়। আমার মেয়ে নিজ নামে সব সম্পদ করে। সেই সম্পদের জন্য আওলাদ, আওলাদের বোন, ভাইসহ পুরো পরিবার আমার মেয়েকে কৌশলে হত্যার পর লাশ গুম করে। হত্যার দুই মাস পর আজ পুলিশ আমার মেয়ের লাশ উদ্ধার করে। আমি খুনিদের সবার ফাঁসি চাই।
নিহতের ভাই রবিন কালবেলাকে বলেন, আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে লাশ গুম করেছে তার স্বামী, ননদসহ পুরো পরিবার। ঘটনার দুই মাস পরে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি হত্যার সাথে জড়িত সবার ফাঁসি দাবি করেন।
মো. আশরাফুল আলম (সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার দোহার সার্কেল) বলেন, জুনের শেষের দিকে রেহানা দেশে আসে। ঠিক তার কয়েকদিন পরে তার স্বামী আওলাদ হোসেন অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে আসেন। তারা দুজনেই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তারা ২০ বছর ধরে সংসার করছেন অস্ট্রেলিয়াতেই। তাদের পাঁচ সন্তান রয়েছে। তবে তাদের বেশিরভাগ সম্পত্তি বাংলাদেশে। সেগুলো দেখতে রেহেনা মাঝে মধ্যেই দেশে আসেন। সেই সম্পত্তির অধিকাংশ রেহেনার নামে। এর জেরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রেহানাকে তুলে নিয়ে হত্যার পর আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের মনোদিয়া চৌরাপাড়া গ্রামের নির্মাণাধীন বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু সে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তাই অ্যাম্বাসিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় দিয়ে আসতে হয়। কিন্ত রেহেনা ফিরে না যাওয়ায় অ্যাম্বাসি থেকে তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়। এরপরও রেহেনা ও তার স্বামী আওলাদ হোসেনকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে জানতে পারে গত ১৩ জুলাই আওলাদ হোসেন অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছে। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে একটি জিডি ও পরবর্তীতে একটি মামলা দায়ের করেন।
মন্তব্য করুন