কেঁচো সার উৎপাদন করে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরচান্দা গ্রামের রিনা বেগম। বর্তমানে তার মাসিক আয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
সময়ের সঙ্গে বাড়ছে সার উৎপাদনের সক্ষমতা। সে সঙ্গে বাড়ছে পরিচিতি ও আয়। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় গ্রাম, সমাজ, আত্মীয়স্বজনদের কাছে গুরুত্বও পাচ্ছেন তিনি।
এ ছাড়া সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বিভাগীয় জয়িতা সম্মাননাও পেয়েছেন এ নারী।
এদিকে স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, রিনা বেগমের কেঁচো সারের মান ভালো। হাতের নাগালে ভালো মানের সার পাওয়ায় তারা উপকৃত হচ্ছেন। তুলনামূলক দামও কম। এতে ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছ সুস্থ-সবল হওয়ায় পোকামাকড়ের আক্রমণও কম। ফলে কীটনাশকও কম প্রয়োগ করতে হচ্ছে।
কৃষক আনসার ও রাকিব গাজী জানান, চলতি মৌসুমে কেঁচো সার ব্যবহার করে লাউ ও মরিচের চাষ করেছেন তারা। ফলনও ভালো হচ্ছে।
আলতাফ গাজী নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘রিনা বেগমের উৎপাদিত সার দিয়ে ধান, ভুট্টা, মরিচ ও মুগডাল চাষ করেছি। অন্য সারের তুলনায় অর্ধেক খরচ হয়েছে এবং ফলনও ভালো আসে।’
সার উৎপাদন বিষয়ে রিনা বেগম বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ২০১৪ সালে বিদেশি জাতের তিন কেজি কেঁচোর সাতটি চাড়ি দিয়ে খামার শুরু করি। এখন আমার খামারে ৫০০টি চাড়ি, ১৫টি হাউস ও দুটি শেড রয়েছে। এ শেড থেকে যে সার উৎপাদন হয়, সেগুলো আমরা ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। প্রথম চার বছরে চার লাখ টাকার বেশি কেঁচো বিক্রি করেছি।’
উৎপাদন কৌশল বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গোবর, তরকারির খোসাসহ আবর্জনা দিয়ে কেঁচোর মাধ্যমে প্রক্রিয়া করে আদর্শ ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করা হয়। এগুলো ফসল চাষে মাটির জন্য খুব উপকারী। কেঁচো, গোবর, কচুরিপানা, কলাগাছ, খড়কুটো দিয়ে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে কেঁচো বা জৈব সার তৈরি করা যায়। এলাকার বেশিরভাগ কৃষক অন্য সারের পরিবর্তে আমার সার ব্যবহার করেন। রিং, কারেন্ট ও হাউস পদ্ধতিতে এ সার উৎপাদন করি। বিষমুক্ত নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কেঁচো সারের কোনো বিকল্প নেই।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা ইসলাম বলেন, ‘রিনা বেগমের আগ্রহের কারণেই আমরা তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। মাঝে মধ্যে তার খামার পরিদর্শন করে পরামর্শ দেই।’
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কেঁচো সার ফসল উৎপাদনের জন্য অনেক ভালো। এ সার ব্যবহারের খরচও অনেক কম। তাই এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়াতে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি।’
মন্তব্য করুন