শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘মা হইয়া নিজের পুলারে চিনতে কষ্ট অয়’

ছাত্র আন্দোলনে আহত খোকন চন্দ্র বর্মন। ছবি : সংগৃহীত
ছাত্র আন্দোলনে আহত খোকন চন্দ্র বর্মন। ছবি : সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে গুলিতে আহন হন শেরপুরের খোকন চন্দ্র বর্মন। তিনি নালিতাবাড়ী উপজেলার কিনা চন্দ্র বর্মনের ছেলে।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আহত হন তিনি। পুলিশের ছররা গুলি খোকনের মুখ ও চোখের নিচের অংশে লাগে। এতে তার এক চোখ নষ্ট হয়ে যায়। আর মুখের এমন অবস্থা হয়েছে যে কেউ চিনতেই পারে না এটা খোকন। তার চোখের নিচের হাড় ভেঙে যায়। আর যে চোখটা ভালো আছে সেটাও এখন উন্নত চিকিৎসার অভাবে নষ্ট হওয়ার পথে। হাসপাতালের বিছানা তার একমাত্র ঠিকানা।

খোকনের মা রিনা রানী দাস বলেন, ‘পুলাডার এমন দশা হইছে, এহন মা হইয়া নিজের পুলারে চিনতে কষ্ট অয়। পুলাডা নিজের শরীরের অনেক যত্ন করত। পুলাডা আমার অহন কান্দে আর কান্দে, আর কয়; তোমরা সরকারকে কও তাড়াতাড়ি যেন আমারে ভালা কইরা দেয়। আন্দোলনের পর সরকার কইছিল যাদের ভালা চিকিৎসা প্রয়োজন তাগোর চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। কিন্তু এহনো কোনো ব্যবস্থা হয় নাই। আমরা অহন কী করমু বুঝবার পারতাছি না।’

পরিবারের সদস্যরা জানান, খোকন ও তার ভাই খোকা পরিবারের আয়ের উৎস ছিল। খোকন আহত হওয়ার পর থেকে তার বড় ভাই খোকা ছোট ভাইয়ের দেখাশোনা করার জন্য চাকরিটা ছেড়ে দেয়। দুই ভাই এক কোম্পানিতে গাড়িচালক ছিল। আহত হবার আগেও আন্দোলনে বেশ কয়েক দিন গিয়েছিল সে। ছাত্র আন্দোলন জোরদার হলে বন্ধ হয়ে যায় তার অফিস। ফলে বন্ধু ও সহকর্মীদের নিয়ে অংশগ্রহণ করে আন্দোলনে। বর্তমানে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে (শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট) চিকিৎসা নিচ্ছে খোকন।

মুঠোফোনে খোকন চন্দ্র বর্মন বলেন, পুলিশ আমাকে খুব কাছ থেকে গুলি করেছে। গুলিতে আমি মাটিতে পড়ে যাই, তবে জ্ঞান হারাইনি। গুলি লাগার পর ছাত্ররা আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ফোনে আমার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। আমি জানতাম আন্দোলনে গেলে মরতেও হতে পারে। তবুও ভয় পাইনি। কপাল খারাপ গুলি খেয়ে গেলাম। আমার মুখের অবস্থা একদম ভালো না। অনেক যন্ত্রণা হয়। শুনছি উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে বিদেশ পাঠাবে‌। কিন্তু তিন মাস হয়ে গেল কিছু তো হচ্ছে না। শুধু সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া, আমার চিকিৎসার ব্যবস্থাটা যেন করে দেয়।

খোকনের বড় ভাই খোকা চন্দ্র বর্মন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস ভাই (সারজিস আলম) এসেছিলেন। তিনি কিছু সহযোগিতা দিয়ে গেছেন। আর কিছু ধারদেনা করে সংসার চলছে। আমার চাকরি ছিল সেটাও চলে গেছে। আমার ভাই এখন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছে। খোকনের একটি চোখ পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে গেছে, অলরেডি আরেকটি চোখ ফুলে আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা না করা হলে ওইটার অবস্থাও খারাপ হবে। গুলি চোখ-মুখ-নাক সব জায়গায় লেগেছে। খোকনকে এখন সহজে চেনাই যায় না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নির্বাচন কবে, জার্মানির রাষ্ট্রদূতকে জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

দেশে মোট ভোটারের চূড়ান্ত সংখ্যা প্রকাশ

লিজা ও কণার নতুন গানে মুগ্ধ শ্রোতারা

রাতে বিদেশযাত্রার অনুমতি চাইলেন স্বামী, সকালে না ফেরার দেশে

পুলিশের সামনে ছাত্রলীগের মিছিল, এসআই ক্লোজড

‘সুখবর’ পেলেন বিএনপির আরেক নেতা

অবশেষে শেষ হলো শিরীন শিলার ‘নীল আকাশে পাখি উড়ে’

পাহাড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ছে, সেনাবাহিনী কেন লক্ষ্যবস্তু?

‘শেখ হাসিনার ফাঁসি কার্যকর হলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে’

‘ছেলের কথা শুনতে পারলে কলিজাটায় শান্তি লাগতো’

১০

প্রচণ্ড মাথাব্যথা? দূর করবেন যেভাবে

১১

প্রযোজকের কু-প্রস্তাবের শিকার পায়েল

১২

যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি আমিনুলের

১৩

চবির ৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন / বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে চালু ছিল ক্লাস-পরীক্ষা, হয়নি আলাদা আয়োজন 

১৪

আদালতের নিরাপত্তা বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

১৫

পারিবারিক কলহ, স্ত্রীর পিঁড়ির আঘাতে স্বামী নিহত

১৬

স্ত্রীসহ মহীউদ্দীন খান আলমগীরেরর ৩৩ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ 

১৭

খুলনা শিশু হাসপাতালের নতুন তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রদীপ দেবনাথ

১৮

অক্টোবর মাসে সড়কে ঝরেছে ৪২৩ প্রাণ, আহত ৫৮৯ 

১৯

হবিগঞ্জ হাসপাতালে নার্সকে মারধরের ঘটনায় কর্মবিরতি

২০
X