সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গত ১০ দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে সবজি চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে করলা, মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ ও মরিচ চাষিদের ক্ষতির পরিমাণটা বেশি হয়েছে। অতি বৃষ্টির ফলে যেন সারা বছরের লালন করা স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে এখানকার চাষিদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সবজির গ্রামখ্যাত কুমির মারার বিভিন্ন জায়গায় করলা, মিনা, ধুন্দল, মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ ও বোম্বে মরিচের গাছের গোড়া পচে গেছে। গাছ আস্তে আস্তে নেতিয়ে পড়েছে। ছোট ছোট করলার পাশাপাশি পরিপক্ব করলাও লাল হয়ে গেছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ ও বোম্বে মরিচ গাছ পঁচে গেছে পাশাপাশি শত শত তরমুজ অপরিপক্বতার অভাবে বাজারে বিক্রির অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
মূলধন হারিয়ে দিশাহারা কুমিরমারা গ্রামের মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষি হারুন অর রশিদ নামে এক চাষি। ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার চিন্তাই বিভোর তিনি। কথা হয় মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষি মো. হারুন অর রশিদ গাজীর সঙ্গে। তার চোখে মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট করে দেখা যায়। তিনি বলেন, গত বছর ২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করছি। এবারে অতিবৃষ্টির কারণে আমার সব শেষ হয়ে গেল। দুই হাজার টাকারও তরমুজ বিক্রি করার মতো নাই। আর ১০টা দিন সময় পেলেই সব তরমুজগুলো বিক্রির উপযোগী হয়ে যেত। কপাল খারাপ আমার। এবারে বেশি জায়গায় তরমুজ দিয়েছি, তাই মূলধনও শেষ হয়ে গেল। কমপক্ষে দুই লাখ টাকা ক্ষতি হলো আমার। এ রকম আরও চাষির ক্ষতি হলো।
কুমিরমারা গ্রামের হাবিব মল্লিক বলেন, শুরুতে ভালোই বিক্রি করছি করলা। শেষ সময় এসে সব পচে গেছে বৃষ্টির কারণে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার তিন দিন পর থেকেই আমি পাইকারি দিয়েছি মাত্র ১৫ টাকা করে, যেটি এক সপ্তাহ আগে ৭০ টাকা ছিল বলে এবারে আমি পাঁচ বিঘা জমিতে করলা চাষ করছি। এই বৃষ্টিতে আমার ৬০ থেকে ৭০ মণ করলা পঁচে গেছে। যদি এত বৃষ্টি না হতো তাহলে নতুন করে আরও অন্তত ১০০ মণ করলা উঠতো।
একই এলাকার ফারুক গাজি বলেন, আমার স্বপ্ন এবারে শেষ। আর বর্ষার মৌসুমে তরমুজ চাষ করব না। মূলধনই নাই। এখন অন্য কিছু চাষ করার চিন্তা করছি। এই বিলের খাল দিয়ে তেমন পানি না নামার কারণেও মূলত গাছ বেশি পচে যায়। এতে ক্ষতির পরিমাণটা বেশি হলো।
স্থানীয় ইউপি মেম্বর মহিবুল্লাহ গাজী বলেন, কুমিরমারা থেকে উৎপাদিত সবজি পুরো জেলাকে সাপোর্ট করে। কখনো কখনো ঢাকাসহ নানা এলাকায় সবজির চালান হয়ে থাকে। কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হল। আমি ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো বরাদ্দ দেওয়া যায় কিনা তা দেখব।
কলাপাড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, টানা বৃষ্টিতে কলাপাড়া উপজেলায় সবজি, মাছ, বীজতলাসহ ব্যাপক ক্ষতি হলো। বিশেষ করে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা চাষিদের ক্ষতির পরিমাণটা আরও বেশি কারণ এখানে অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা সবজি চাষ করে। সরকারি কোনো বরাদ্দ আসলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের মাঝে বিতরণ করব যাতে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে।
মন্তব্য করুন