সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে ভোগান্তিতে আছেন রোগীরা। রুমে গিয়ে ডাক্তার পাচ্ছেন না রোগীর স্বজনরা।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর, নার্সদের হেনস্তা ও ভাঙচুর করার প্রতিবাদে আগামীকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। কর্মবিরতির ডাক দেওয়ার পর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই দফায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে বৈঠক করলেও কর্মবিরতি থেকে সরে যাননি আন্দোলনকারীরা।
ওসমানী মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সম্মুখে এক রোগীর স্বজন সোনা মিয়ার সাথে দেখা হলে তিনি কালবেলাকে জানান, ‘গতকাল সোমবার আমার বাবাকে ওসমানী মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো ডাক্তার আমার বাবাকে দেখতে যাননি। নার্স এসে শুধু স্যালাইন দিচ্ছে আর বলছে ডাক্তাররা নাকি ধর্মঘট ডেকেছেন। তারা ধর্মঘট করবে তাদের স্বার্থে আমার রোগী বাচউক আর মরউক তাতে ডাক্তারের কী আসে যায়। সমস্যা তো আমাদের।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসককে আর ডাক্তার কে ইটা আমার জানার বিষয় নয়, আমার কথা হলো রোগীর ভালা চিকিৎসা।’
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, রোগী নিয়ে স্বজনরা জরুরি বিভাগের সামনে বসে আছেন। ভাবছেন ভর্তি হয়েই লাভ কী যদি ডাক্তার না পাই, তাহলে তো চিকিৎসা পাবেন না। বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ার্ডে চিকিৎসক ও নার্স আছেন। কিন্তু ইন্টার্নি না থাকায় রোগীর সেবা দিতে চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন।
মেডিকেলের ৩য় তলার ১৩নং ওয়ার্ডের এক নার্স কালবেলাকে জানান, সকাল থেকে আমরা ও মিডলেবেলের কয়েকজন চিকিৎসক কাজ করে যাচ্ছি। ইন্টার্নি ডাক্তার না থাকায় পুরোপুরি রোগীর সেবা দিতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। আমরা রোগীর সেবা দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু রোগীদের স্বজনরা ইন্টার্ন চিকিৎসক না থাকায় তারা মনে করছেন মেডিকেলে ডাক্তার কমে গেছেন।
রোগীর আরেক স্বজন আব্দুস সামাদ জানান, ৪-৫ দিন ধরে আমরা রোগী নিয়ে ভর্তি আছি। ৩-৪ দিন ভালো চিকিৎসা হয়েছে। গতকাল থেকে কোনো ডাক্তার পাচ্ছি না।
এদিকে, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর, নার্সদের হেনস্তা ও ভাঙচুর করার প্রতিবাদে আগামীকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। কর্মবিরতির ডাক দেওয়ার পর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই দফায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে বৈঠক করলেও কর্মবিরতি থেকে সরে যাননি আন্দোলনকারীরা।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক শেষে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত মজুমদার বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে আমাদের দাবিগুলোর দৃশ্যমান উন্নতি হয় তাহলে আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করব।
এ বিষয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়ে ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব আলম ভূঁইয়া বলেন, ইন্টার্নি চিকিৎসকদের দাবি হচ্ছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যদি আমাদের চোখে তা পরিলক্ষিত হয় তবে আমরা আমাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিব।
এদিকে ভাংচুরের ঘটনায় সোমবার রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় হাসপাতালের ওয়ার্ডমাস্টার রওশন হাবিব চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশের হাতে আটক হওয়া রোগীর চার স্বজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার আদালতে পাঠায় পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, হাসপাতালে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় পুলিশ রোগীর চার স্বজনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। তাদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
তিনি জানান, সোমবার বিকেলে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বজনেরা হাসপাতালের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুরের পাশাপাশি দায়িত্বরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের হুমকি দেন। এর প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ শাখা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়।
জানা যায়, সোমবার বিকেলে হাসপাতালের ৩৫নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোগী মারা যান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সাথে রোগীর স্বজনদের কথাকাটাকাটি হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ, রোগীর স্বজনরা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের হেনস্তা করেন। এ সময় চিকিৎসকরা দৌড়ে পাশের ওয়ার্ডে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। এরপর রোগীর স্বজনরা ওয়ার্ডের ভেতরে চিকিৎসকের কক্ষে ও নার্সের কক্ষে ভাংচুর চালান। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাতে বৈঠক করে অনির্দিষ্টাকালের কর্মবিরতির ডাক দেয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টান চিকিৎসক পরিষদ।
মন্তব্য করুন