মো. আজিজুর রহমান, গোয়াইনঘাট (সিলেট)
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বালু-পাথর উত্তোলনে ধ্বংস হচ্ছে জাফলং

অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রকৃতিকন্যা জাফলং। ছবি : কালবেলা
অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রকৃতিকন্যা জাফলং। ছবি : কালবেলা

অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে প্রকৃতিকন্যা জাফলং। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের জুমপাড় কালীবাড়ি মন্দির, জুমপাড় বাঁধ, বালির হাওর, বাংলাবাজার ইসিএভুক্ত এলাকায় প্রতিনিয়ত ফেলুডার, বোমা মেশিন দিয়ে চলছে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন।

জুমপাড় কেটে অর্ধশতাধিক গর্ত তৈরি করে পাথর উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে শ্রী শ্রী জুমপাড় কালীবাড়ি মন্দিরসহ শতাধিক একর ফসলি জমি, পান-সুপারির বাগান, চা বাগান, বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

জাফলং রক্ষায় টাস্কফোর্সের অভিযান ও একাধিক মামলায় দুই শতাধিক ব্যক্তিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মামলা করলেও কোনোভাবেই থামছে না অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন।

স্থানীয়রা জানান, এসব কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী একটি চক্র। প্রশাসনের দায়সারা কাজে নির্বিঘ্নে এই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। মাঝে মধ্যে টাস্কফোর্সের অভিযান হলেও আগেই খবর চলে যায় চক্রের কাছে। ফলে এসব অভিযান কোনো কাজেই আসছে না। জাফলং ইসিএভুক্ত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ বিধি না মেনে ফেলুডার মেশিন দিয়ে চলছে পাহাড় ও মাটি কেটে পাথর উত্তোলন। প্রশাসনের এমন দায়সারা অভিযান স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করে। প্রতিদিন বালু-পাথর নিয়ে শত শত ট্রাক চলে যাচ্ছে। নদী আর বাঁধের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জাফলং ও বিছনাকান্দি পর্যটন স্পট, জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে পাথর লুটপাটের ঘটনা ঘটে। শুধু জাফলং পর্যটন স্পটসহ ইসিএভুক্ত এলাকার কোয়ারি থেকে শত কোটি টাকার পাথর লুট হয়। এসব পাথর লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বাদী হয়ে সিআর ও জিআর পৃথক ছয়টি মামলা করেন। ঘটনার কয়েক মাস পার হয়ে গেলেও আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জাফলং জুমপাড় কালীবাড়ি মন্দির এলাকায় পাহাড়ি ঢল থেকে কয়েকটি গ্রাম রক্ষায় নির্মিত জুমপাড় বাঁধের দুই পাশে অর্ধশতাধিক বোমা মেশিন, শ্যালো মেশিন, ফেলোডার ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে দিন-রাত গর্ত করে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন চলছে।

এ ব্যাপারে কয়েকজন বলেন, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী তামাবিল স্থলবন্দর পাথর আমদানি গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক হেনরি লামিন ও আবদুল আহাদের নেতৃত্বেই চলছে এ পাথর উত্তোলন। আর জাফলং জিরো পয়েন্টের টিকলি, জুমপাড়, বরুনের জুং, বল্লাঘাট এলাকায় গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিলেট জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন ও সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা শাহ পরানের নেতৃত্বে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন চলছে। তারা চারজনই পরিবেশ অধিদপ্তরের করা মামলায় আসামি।

জুমপাড় মন্দির এলাকায় পাথরের গর্তে কাজ করা শ্রমিক খোকন মিয়া বলেন, আমি এখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। আমার কাজ শ্রমিকদের পাথর পরিবহনের গুটি দিয়ে টুকরি গুনে হিসাব রাখা। গর্তের মালিক হেনরি লামিন ও আহাদ মিয়া।

কালীজুড়ি থেকে আসা কয়েকজন পাথর শ্রমিক জানান, প্রায় এক মাস ধরে হেনরি লামিনের গর্তে দৈনিক ১ হাজার টাকায় শ্রমিকের কাজ করেন তারা। মন্দির এলাকার গর্তসহ আরও চারটি গর্তের মালিক হেনরি লামিন। হেনরি লামিন সবসময় আসেন না এখানে, মাঝেমধ্যে আসেন। গুটি দেওয়া শ্রমিক খোকনের ভাই ম্যানেজার বকুলের দায়িত্বেই পাথরের কাজ চলে।

তবে সব বালু-পাথর উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপন। তিনি বলেন, ‘জাফলং কোয়ারিতে আমার কোনো জায়গা নেই। গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম ও জাফলং আমার বাড়ি হওয়ায় অনেকে মনে করে, আমার নেতৃত্বে জাফলংয়ে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন হচ্ছে। মূলত আমি এসবে জড়িত নেই। তারপরও আমার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা হয়েছে।’

সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বলেন, জাফলংয়ে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের দায়ে এরই মধ্যে ৯৮ জনকে আসামি করে ছয়টি সিআর এবং ১২৩ জনকে আসামি করে দুটি জিআর মামলা করা হয়েছে। বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ সচেতন না হলে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ করা কঠিন, পুরো জাফলংয়ের বেশিরভাগ লোকই এখানকার সুবিধাভোগী। এই বালু-পাথর উত্তোলন যখন শুরু হলো, তখন কেউ প্রতিবাদ করেনি, বরং সুবিধা নিয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী কালবেলাকে বলেন, জাফলংয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তালন বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে জাফলং ইসিএ এলাকায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করেও পাথরখেকোদের থামানো সম্ভব হচ্ছে না। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ড. ইউনূস

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু, কেয়ারটেকারকে ঘিরে সন্দেহ

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে অতিরিক্ত নিরাপত্তায় ৬ নির্দেশনা

খালসহ ১০টি জলমহাল উন্মুক্ত করলেন খুলনার জেলা প্রশাসক

৩০ আগস্ট ইতালির প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন

জুলাই শহীদদের স্মৃতি স্মরণে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন

বছর ঘুরে ফিরল সেই জুলাই 

৩৬ জুলাই বিপ্লব ও নির্মম নির্যাতনের মধ্যেও বেঁচে ফেরার গল্প

৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ / এস আলম পরিবারের তিন সদস্যসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে দুই মামলা

১০

খুবির দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনকে কটাক্ষের অভিযোগ

১১

রাজশাহীতে ঐতিহাসিক ‘সান্তাল হুল’ দিবস উদযাপন

১২

২৯৫ জন অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী করল চসিক

১৩

যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেন ইউনূস-রুবিও

১৪

করোনার ‘ভুল রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা’, অতঃপর...

১৫

ইরানে একাধিক ইউরোপীয় নাগরিক গ্রেপ্তার

১৬

ঢাবি শিক্ষার্থী সৌমিকের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

১৭

ছাত্রদল কর্মীর নেতৃত্বে হাবিপ্রবিসাসের অফিসরুম ভাঙচুর

১৮

গাজাবাসীর জন্য বিশেষ ভিসা চালু করতে স্টারমারকে ব্রিটিশ এমপিদের চিঠি

১৯

পাবিপ্রবিতে শিক্ষাবৃত্তি ও গবেষণা প্রণোদনা প্রদান

২০
X