শঙ্খ নদী ও বঙ্গোপসাগরের অবিরত ভাঙনে বিলীন হচ্ছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার উপকূলীয় ইউনিয়ন রায়পুর ও জুঁইদন্ডী। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের দীর্ঘ ৩৪ বছর পরও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন না করা ও নিম্নমানের কাজের কারণ এসব ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।
আগামী বর্ষার আগে ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে রায়পুর ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এতে প্রায় পাঁচ শতাধিক একর ধানি জমিসহ এক হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিকেলে রায়পুর ও জুঁইদন্ডীর বেড়িবাঁধ এলাকায় দেখা যায়, বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে, কিছু কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ছিড়ে বালু বেরিয়ে গেছে। জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ২নং ওয়ার্ড পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে নদীতে চলে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বারশতের পারকি থেকে রায়পুর, জুঁইদন্ডী, বরুমচড়া ও বারখাইন ইউনিয়নের প্রায় ৪০ কিলোমিটার সাগর ও শঙ্খনদী উপকূলের কিছু কিছু এলাকায় পাথর বসালেও অধিকাংশ বালির বস্তা ও মাটির বাঁধ। এর মধ্যে রায়পুরের বাঁচা মাঝির ঘাট, পূর্বগহিরা, সরেঙ্গা ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের মাঝিরঘাট লোয়াইর ঘোনা থেকে ২নং ওয়ার্ড চাঁদমিয়া মাঝির বাড়ি পর্যন্ত ভাঙন দেখা দিয়েছে।
রায়পুর ইউনিয়নের ঘাটকুল এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। ২০১৮ সালে সরকার ৫৭৭ কোটি টাকার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজে রায়পুর ইউনিয়নের ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৮ কিলোমিটার ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের প্রায় ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে পাথরের ব্লক বসানো হয়।
তবে এসব কাজে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় ও জোয়ারে এই সব এলাকা প্লাবিত হয় প্রতিবছর। বর্তমানে ৫ শতাধিক একর জমির ফসল ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া অর্ধশাতাধিক মৎস্য ঘেরও রয়েছে ঝুঁকিতে। চলতি বর্ষার আগে ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হাজারেরো অধিক কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বে। তারা টেকসই বাঁধ নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, আনোয়ারা উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ২০১৮ সালে সরকার ৫৭৭ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু করে। প্রকল্পে রায়পুর ইউনিয়নের ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে পাথরের ব্লক বসানো হয়। বাকি ৫ কিলোমিটার এলাকায় মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ এবং ৫ কিলোমিটারের মধ্যে গহিরা সাগর উপকূলে ২ হাজার ৭০০ মিটার ও সরেঙ্গা শঙ্খ নদীর ২ হাজার ৪০০ মিটারও রয়েছে।
এর মধ্যে গহিরা সাগর উপকূলের জন্য ১৮০ কোটি ও রায়পুর ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নে শঙ্খ নদীর ভাঙন এলাকার জন্য ১৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এসব কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।
স্থানীয় কৃষক আবুল কালাম বলেন, কয়েক বছর ধরে আমরা আউশ ও আমন চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, দুইটি মৎস্য ঘেরও চলে গেছে। বর্ষার আগে বাঁধ সংস্কার না করলে এ বছর চাষের আশা ছেড়ে দিতে হবে।
জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান খোকা বলেন, আনোয়ারার উপকূল সুরক্ষিত নয়। উপকূলের রায়পুর ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের প্রায় ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত। বিগত সরকারের প্রতিনিধিরা বরাদ্দের নামে লুটপাট করেছে। দ্রুত বর্ষার আগে বেড়িবাঁধ মেরামত না করলে নতুন করে জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের ১ হাজার পরিবার ভাঙনের কবলে পড়বে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহিদ বলেন, আনোয়ারার উপকূল রায়পুর ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের শঙ্খ নদীর আড়াই কিলোমিটার ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ও পাথর দিয়ে মেরামতের জন্য ১৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা বারআউলিয়া বাইগ্যেরঘাট এলাকাসহ আশপাশের ২ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার ভাঙন এলাকায় পাথর ও জিও ব্যাগ দিয়ে মেরামতের জন্য ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত জিও ব্যাগ বসানো হবে। এসব কাজে ঠিকাদার নিয়োগ ও তদারকি করবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এ ছাড়া পারকি সৈকতের ভাঙন এলাকায়ও পাথর দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।
মন্তব্য করুন