বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫, ০৮:৩৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কলেজের অর্থ আত্মসাৎ করে লন্ডনে পাড়ি জমালেন শিক্ষক দম্পতি

অভিযুক্ত শিক্ষক দম্পতি। ছবি : সংগৃহীত
অভিযুক্ত শিক্ষক দম্পতি। ছবি : সংগৃহীত

পতিত আওয়ামী সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য পংকজ নাথের আত্মীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটাতেন তিনি। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হয়েছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ। সে দাপটে গত আট বছরে আত্মসাৎ করেছেন কলেজের ৬৫ লাখ টাকা। আর ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পরই কলেজশিক্ষক স্ত্রী এবং সন্তান নিয়ে দেশ ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন লন্ডনে।

এ অভিযোগ উঠেছে বরিশালের সদর রোড অশ্বিনী কুমার টাউন হল সংলগ্ন বরিশাল সিটি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কলেজটির অডিট রিপোর্টে উঠে আসে তার অর্থ কেলেঙ্কারির তথ্য। এ ঘটনায় সুজিত কুমারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দিয়েছে সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, বরিশাল সিটি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন সুজিত কুমার দেবনাথ। তার স্ত্রী রীনা রানী সুতার বরিশাল নগরীর কাউনিয়া আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে কলেজে অনুপস্থিত রীনা।

বরিশাল সিটি কলেজ শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বরিশাল-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের আত্মীয় পরিচয় দিতেন সুজিত কুমার দেবনাথ। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার আমলে সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এবং সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল তার। সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং মেয়রের প্রভাবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ২০১৫ সালে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।

শিক্ষকদের অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় সুজিত কুমার দেবনাথের অনিয়ম এবং দুর্নীতি। টানা প্রায় আট বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতির আঁতুড় ঘরে রূপ দেন কলেজটিকে। যার প্রমাণ উঠে আসে গত ৪ ফেব্রুয়ারি দাখিল করা চার সদস্যের অডিট কমিটির রিপোর্টে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ৯ বছরে ৬৫ লাখ ৫৩ হাজার ১৩৭ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সুজিত কুমার। তাছাড়া দায়িত্বকালীন সময়ে কলেজির বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে কলেজ সংলগ্ন ফকিরবাড়ি রোডের এক যুবকসহ কয়েকজনের কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন সুজিত কুমার।

অডিট রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৩৭ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৮৭ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৯৫ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯১ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩৯ হাজার ২৬৮ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮৬৬ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ লাখ ৭৭ হাজার ২৪৭ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ লাখ ৯০ হাজার ৫৮৬ টাকা ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ লাখ ৩ হাজার ৩৬০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সুজিত কুমার দেবনাথ।

এ সময়ে তিনি কলেজের গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র, আয়-ব্যয়ের হিসাব, ক্যাশবই, আয় এবং ব্যয়ের রেজিস্ট্রার, পরিচালনা পরিষদের রেজ্যুলেশন বই, কলেজের জমিজমার দলিলপত্র, অতি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কলেজের ব্যবহৃত মোবাইল সিম কার্ডটিও আত্মসাৎ করেছেন।

অডিট ও নিরীক্ষা কমিটি আহ্বায়ক মুহাম্মদ মুয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, ২০১৫ থেকে অবসরের আগ পর্যন্ত সুজিত কুমার দেবনাথের কাছে ৬৫ লাখ ৫৩ হাজার ১৩৭ টাকা পাওনা রয়েছে। এ ছাড়া কলেজের গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও কাগজপত্র আত্মসাৎ করেছেন তিনি। অডিট রিপোর্ট গভর্নিং বডির কাছে পাঠানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় সুজিত কুমার দেবনাথকে। অব্যাহতি দেওয়ার ১৭ মাস পর তিনি কলেজে আসেন। এরপর ২০২৫ সালের ৬ এপ্রিল অবসরে যান।

এর আগে ২০২৪ সালের ২১ জানুয়ারি তাকে শোকজ করা হয়। কিন্তু সেখানেও ক্ষমতার প্রভাব দেখাতে গিয়ে জবাব দেননি শোকজ নোটিশের। এরপর তার বিরুদ্ধে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে, সুজিত কুমার দেবনাথের স্ত্রী রীনা রানী সুতার শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। কলেজটি জাতীয়করণের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর শ্যালক, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মফিজুল ইসলাম কামালের সুপারিশে চাকরি পান তিনি। কাজী কামালের স্ত্রী ও রীনা রানী দুজন বান্ধবী। তাই কলেজে অনুপস্থিত থেকেও নিয়েছেন বেতন-ভাতা। এরপর স্বামী-স্ত্রী দুজনেই উড়াল দেন লন্ডনে।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুস সালাম বেপারী বলেন, কলেজে অনুপস্থিত থাকায় এর আগে শিক্ষক রীনা রানী সুতারকে দুই দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আরও একটি নোটিশ পাঠানো হবে। জবাব না পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়া হবে।

বরিশাল সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বলেন, সুজিত কুমার কলেজটির দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করেছিলেন। তাছাড়া চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি কোনো জবাব দেননি। গত ২৪ এপ্রিল গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘টুম্পার মা নয়, আমার মা-ই সবচেয়ে ভালো!’

থামছেই না পদ্মার ভাঙন

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় শ্রমিকের মৃত্যু

ঢাবিতে কয়রা ছাত্রদের সংগঠন ডুসাকের নতুন কমিটি

বাকশাল সিপিবির বিচার চান এনসিপি নেতা তুহিন

আইপিএলে ফিরতে চাচ্ছেন না অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা

আন্তর্জাতিক নার্স দিবস আজ

সারা দেশে শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস 

জরুরি বৈঠকে বসেছেন মোদি, উপস্থিত ৩ বাহিনীর প্রধান

গাজা যুদ্ধের সমাধান খুঁজছে জার্মানি

১০

বিমানবন্দরে সোনারগাঁও আ.লীগের সহসভাপতি গ্রেপ্তার

১১

চিকিৎসক না থাকায় ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা

১২

ভেলপুরি খেয়ে হাসপাতালে শিশুসহ শতাধিক

১৩

আফগানিস্তানে দাবা খেলা নিষিদ্ধ

১৪

ব্রহ্মপুত্র নদে ভাসছিল নিখোঁজ ২ ভাইয়ের মরদেহ

১৫

আবারও রেকর্ডের পথে রেমিট্যান্স

১৬

দালালদের দখলে কুয়াকাটা বিদ্যুৎ অফিস

১৭

চেনাব নদীর বাঁধ খুলে দিল ভারত, পাকিস্তানে বন্যার শঙ্কা

১৮

দিনাজপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২

১৯

সিভিল সার্জনরা চাইলেই চিকিৎসাসেবার মান উন্নতি সম্ভব : প্রধান উপদেষ্টা

২০
X