শুভাঢ্যা খাল খননের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সোমবার (১২ মে) সকালে কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জ ও শ্মশানঘাট এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান জানান, ঐতিহ্যবাহী শুভাঢ্যা খাল পুনরুদ্ধারে বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। প্রায় ৩১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত শুভাঢ্যা খাল খননের দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। এতে খনন কাজ যেমন কার্যকরভাবে সম্পন্ন হবে, তেমনি সরকারের অর্থ ও সময় উভয়ই সাশ্রয় হবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি জানান, খাল খননের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা থেকে ধলেশ্বরী পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পানিপথ পুনরায় উন্মুক্ত হবে। ফলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও আশপাশের এলাকাগুলোতে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা, পরিবেশদূষণ এবং পানি নিষ্কাশনের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এই খাল খনন জনগণের টাকায় হবে। সুতরাং এর প্রতিটি টাকা যেন সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়, সে দিকটি নিশ্চিত করতেই আমরা প্রকল্পের শুরুতেই মাঠ পর্যায়ে এসেছি। এই খাল নিয়ে আগের সরকার ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প হাতে নিলেও অগ্রগতি খুবই কম ছিল। জায়গা চিহ্নিত করা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ময়লা অপসারণ এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আটকে ছিল প্রশাসনিক জটিলতা ও অবহেলায়। ফলে খালের বিভিন্ন প্রবাহ মুখ বন্ধ হয়ে গিয়ে এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা ও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এবার সেই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার একনেকে প্রকল্প পাস করিয়েছে এবং সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী কৌশল গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, খাল রক্ষার দায় শুধু সরকারের নয়, এলাকাবাসীকেও সচেতন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। নির্মাণ সামগ্রী যেমন- বালু, ইট, সিমেন্ট, পাথর খালের পাশে বা খালের মধ্যে ফেললে এই উন্নয়ন স্থায়ী হবে না।
তিনি বিশেষভাবে গার্মেন্টস ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের বর্জ্য শোধন ছাড়া খালে না ফেলতে অনুরোধ করে জানান, এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হবে। শুধু খাল খনন নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবেশগত পুনরুদ্ধার প্রকল্প উল্লেখ করে উপদেষ্টা জানান, খালের দুই পাশে বনায়ন ও সবুজ বেষ্টনী তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যাতে এলাকার বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয় এবং নগর উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশও সমান্তরালে রক্ষা পায়।
এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে উপদেষ্টা খালের দুই পাশে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রশাসন জানিয়েছে, খুব শিগগিরই একটি তালিকা করে দখলদারদের নোটিশ দেওয়া হবে এবং প্রয়োজন হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমে যাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধতার কবলে না পড়ে, সেজন্য সিটি করপোরেশনগুলোতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকৌশল বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন মাঠে নেমেছে।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টার একান্ত সচিব আবু নঈম, সহকারী একান্ত সচিব আশিকুর রহমান সমী, তথ্য কর্মকর্তা দীপঙ্কর বর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা জেলা প্রশাসন এবং কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, শুভাঢ্যা খাল খননের এই বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে শুধু দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ নয়, বরং গোটা ঢাকা অঞ্চলের পরিবেশ ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এই উন্নয়নকে স্থায়ী করতে চাইলে প্রয়োজন সরকার, সেনাবাহিনী, প্রশাসন ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
মন্তব্য করুন