কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৫, ০৫:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যানজটে নাকাল কিশোরগঞ্জবাসী, বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

বিভিন্ন যানজটে নাকাল কিশোরগঞ্জ পৌরবাসী। ছবি : কালবেলা
বিভিন্ন যানজটে নাকাল কিশোরগঞ্জ পৌরবাসী। ছবি : কালবেলা

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মিশুক ও রিকশার চাপে কিশোরগঞ্জ শহরে চলাচল করা দায়। যানজটে নাকাল পৌরবাসী। নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহনের চাপে শহরবাসীর ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যায় যানজটের কবলে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী, শিক্ষার্থীসহ অফিসগামীরা। ১০ মিনিটের রাস্তা, যেতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা। অদক্ষ চালক ও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। তারপরও যেন টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের।

এক দিকে সরু রাস্তা, তার ওপর অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ। পুরো শহরজুড়ে রাজত্ব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মিশুক ও রিকশার। ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় হাঁটাও দায় হয়ে পড়েছে। অপ্রশস্ত রাস্তা, অটোরিকশার আধিক্য, অদক্ষ চালক, যেখানে-সেখানে অটোস্ট্যান্ড যাত্রী ওঠানামা, ফুটপাত দখল, পার্কিংয়ের জায়গার অভাবসহ নানা কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন শহরবাসী। প্রায় সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়ার পাশাপাশি পঙ্গুত্ববরণ করছেন অনেকেই।

পৌরসভার অনুমোদিত ৬০০ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিপরীতে বর্তমানে কয়েক হাজার গাড়ি চলাচল করছে। প্রতিদিন শহরের প্রবেশ পথ দিয়ে বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসব গাড়ি এসে ঢুকে পড়ছে পৌরশহরে। মূল শহরের ভেতর বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও দোকানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে পার্কিং না দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। শহরের গৌরাঙ্গ বাজার, পুরান থানা, একরামপুর, আখড়া বাজার ও আঠারোবাড়ি কাচারি মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থমকে থাকে গণপরিবহন।

পৌরশহরের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম বলেন, শহরের বাসিন্দা হিসেবে আমরা নাজুক অবস্থায় আছি। যানজটের কারণে হাঁটাচলা করা যায় না। শহরের রাস্তার তুলনায় অটোরিকশা বা বিভিন্ন যানবাহনের কারণে স্বাভাবিক চলাচল করতে পারি না। রোগী, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, অফিসগামী লোকজন সর্বোপরি খুবই বাজে অবস্থায় আছি।

নেত্রকোনা জেলার মদন থেকে আসা কিরণ আহাম্মেদ বলেন, কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আমার একজন রোগী আছে। তাকে দেখতে এসেছি। কিন্তু ১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে যানজটে আটকে আছি। আমার রোগীর অবস্থাও খুব খারাপ, তাড়াতাড়ি যাওয়াটা খুব প্রয়োজন ছিল।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আবু হানিফ বলেন, পুরো শহরজুড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। রাস্তা ছোট, সে কারণে যানজট লেগেই থাকে। তাছাড়া ফুটপাতের দোকানের জন্য গাড়ি চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। কোনো গাড়ি ওভারটেক করে যেতে পারে না।

ডা. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, অনেক সময় ইমার্জেন্সি রোগী থাকে কিন্তু অপরিকল্পিত পার্কিং ও যানজটের কারণে সময়মতো রোগীদের কাছে পৌঁছানো যায় না। রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। এতে তারা খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। আমাদের শহরের নিত্যদিনের চিত্র এটি। দায়িত্বরত ব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় আছে।

শিক্ষার্থী প্রদীপ চন্দ্র কর বলেন, এসব গাড়ি ভয়ানক অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো নিয়ম না মেনেই যেখানে সেখানে গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলে। প্রায় সময় দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হচ্ছে। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। কয়েক দিন আগে এসএসসি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা যানজটের কারণে ঠিক সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়েছে। আদৌ কি এর সমাধান হবে?

কিশোরগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের টিআই (প্রশাসন) সৈয়দ মনিরুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ১৩টি থানা নিয়ে গঠিত এই জেলা শহরে সবার যাতায়াত রয়েছে। জেলা শহরের বটতলা থেকে একরামপুর পর্যন্ত রাস্তাটি সরু। দেখা গেছে, এই সড়কের পাশে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক রয়েছে- এখানে প্রচুর রোগী আসা-যাওয়া করে। তাছাড়া যারা মোটরসাইকেল নিয়ে আসে তারা যত্রতত্র পার্কিং করে রাখে। গুরুত্বপূর্ণ একটি মেডিকেল কলেজ (শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল) রয়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে একটি অটোরিকশা প্রবেশ করলে একটি বড় গাড়ি প্রবেশ করলে যানজট দেখা দেয়।

তিনি আরও বলেন, তাছাড়া যে মোড়গুলো রয়েছে সেগুলো আকারে ছোট। যে ক্লিনিক, হাসপাতাল ও বড় বড় দোকানগুলো রয়েছে, তারা কোনো পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখে না। পার্কিংয়ের অনুমোদন নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড তৈরি করে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করছে। হয় কোনো শো-রুম, রেস্টুরেন্ট, অফিস, দোকান হিসেবে ব্যবহার করছে। নতুন করে আরও যানজট বাড়বে, যেমন এখন হাওরে বোরো ধান কাটা চলছে। বোরো শেষ হয়ে গেলে হাওরে পানি চলে আসবে। বেকার যারা তারা শহরে এসে ৬ মাস অটোরিকশা চালাবে। এসব সমস্যার মধ্যেও আমরা যানজট নিরসনে কাজ করছি। আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। প্রতিদিন আমরা অটোরিকশা বা অবৈধ যে পার্কিং করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রায় প্রতি মাসে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করছি।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক মমতাজ বেগম কালবেলাকে বলেন, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে পৌরশহরে খুব অল্প সময় আগে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সে ঘটনায় জেলা প্রশাসকের বাসভবন মসজিদের ইমাম ও গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী প্রাণ হারিয়েছে। পরবর্তীতে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নিয়ে একটি সমন্বয় মিটিং করেছি। অতিরিক্ত যানবাহন চলার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। সে বিষয়ে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আমরা পৌরসভার পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সিএনজি, অটোরিকশা মালিকদের মধ্যে যারা নেতৃস্থানে আছেন তাদের আমরা ডেকেছি। তারা আমাদের একটি তালিকা করে দেবে, সে তালিকা অনুযায়ী আমরা একটা ফলাফলের পর্যায়ে আসতে পারব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাঞ্ছারামপুরে আম পাড়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, টেটাবিদ্ধসহ আহত ৮

চকরিয়ায় সিএনজি-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

বিসিএস ট্যাক্সেস অ্যাসোসিয়েশন অবৈধ ও বিলুপ্ত ঘোষণা

স্বাস্থ্য পরামর্শ / ঘন ঘন খিঁচুনি মৃগী রোগের লক্ষণ

রাজধানীতে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, একই পরিবারের দগ্ধ ৫

উত্তেজনাপূর্ণ শেষ ২.৫০ মিনিট কী আলোচনা করেছেন পাইলট-এটিসি

‘সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা কমলে দেশ সংকটে পড়বে’ 

প্রায় ২৬ ঘণ্টা ডিবি কার্যালয়ে ছিলাম, বললেন জবি শিক্ষার্থী

‘জীবনের চাকা আপনার হাতে’- আফজাল হোসেনের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন 

ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ‘সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ’ শনিবার

১০

ঢাকায় চলবে বৈদ্যুতিক বাস : উপদেষ্টা আসিফ

১১

ধানমন্ডিতে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিহত

১২

‘বিচার বিভাগের সংস্কার ছাড়া রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে’

১৩

বৃষ্টিতে ভিজে বিজয় উল্লাস জবি শিক্ষার্থীদের

১৪

রাণীশংকৈল ধর্মগড় সীমান্তে অবৈধ পারাপারে যুবক আটক 

১৫

হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে বিচার নিশ্চিতের দাবি যুবদল নেতা শহিদুলের

১৬

মিয়ানমারে নিযুক্ত প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা আফতাবকে প্রত্যাহারের নির্দেশ

১৭

মোহাম্মদপুরে দুর্বৃত্তের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে যুবক নিহত 

১৮

কিডনি রোগী ও প্রবীণদের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

১৯

শিরোপার আরও কাছে মোহামেডান

২০
X