ফেনীর সোনাগাজীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চলছে দ্বিতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষা। মূল্যায়ন সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের থেকে কোনো ফি নেওয়া যাবে না, এমন সরকারি নিদের্শনা থাকলেও উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নের কুঠিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে পরীক্ষার ফির নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি এই নির্দেশনা অধিকাংশ অভিভাবক ও শিক্ষার্থী না জানার সুযোগে টাকা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়, উপজেলা শিক্ষা অফিসার রুটিন প্রণয়ন করবেন। সহকারী শিক্ষা অফিসারের তত্ত্বাবধানে শিক্ষকদের মাধ্যমে জ্ঞান, অনুধাবন ও প্রয়োগমূলক শিখনক্ষেত্র বিবেচনায় বিদ্যালয়/রোস্টার/ উপজেলাভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে হবে। মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনো প্রকার ফি গ্রহণ করা যাবে না।
কুঠিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকরা মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণি ৩০ টাকা, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ ৫০ টাকা নিয়েছেন। পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, শুনেছি সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে পরীক্ষার নামে কোনো টাকা নেবে না স্কুল। কিন্তু আমাদের শ্রেণিকক্ষে স্যার-ম্যামরা বলেছেন, পরীক্ষার টাকা না দিলে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না। পরীক্ষার রুটিনও দেওয়া হবে না। অথচ আমাদের পাশের সরকারি প্রাথমিকে পড়ে তাদের কাছে কোনো প্রকার টাকা নেওয়া হয়নি পরীক্ষার জন্য।
মুন্নি দাস নামের একজন অভিভাবক বলেন, আমার নাতি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। এ মাসের ২১ তারিখে তার পরীক্ষার ফি বাবদ শিক্ষকদের নিকট ৫০ টাকা জমা দিয়েছি।
জুটন কুরী নামের একজন অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। পরীক্ষার জন্য শিক্ষকরা তার কাছ থেকে ৫০ টাকা ফি নিয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি ও অভিভাবক রহমত উল্লাহ জানান, আমার দুজন বাচ্চা তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। পরীক্ষার শুরু আগে পরীক্ষা ফি বাবদ বাচ্চাদের ৫০ টাকা করে দিয়েছি। সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে আমি জানতাম না। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কেনো পরীক্ষার ফি নিল এটা প্রধান শিক্ষকের নিকট জানতে চাইব।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বিষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, পরীক্ষার ফি নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। সরকারি নির্দেশনায় আছে ফি নেওয়া যাবে না। আমি মাত্র জেনেছি, ফি নিচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষিকা বলেন, প্রধান শিক্ষক শিক্ষকদের নেতা হওয়াতে তার খেয়াল-খুশিমতো সব করে থাকেন। সহকারী শিক্ষকদের পাত্তা দেন না। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে পরীক্ষার ফি নেওয়াটা অন্যায়। সহকারী শিক্ষকদের কোনো দোষ নেই। প্রধান শিক্ষক যা বলে সে অনুযায়ী চলতে হয়।
পাশ্ববর্তী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, পরীক্ষার ফি নেওয়ার সুযোগ নেই। স্কাউট ফি বাবদ ১০ থেকে ২০ টাকা নিতে পারে। তবে ৩০ থেকে ৫০ টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, এটা অন্যায়।
এ বিষয়ে জানতে কুঠিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তৈয়বের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার ফি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোনো অভিভাবক লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিনকে এ বিষয়ে জানালে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসকে বিষয়টি জানাতে। তারা আগে তদন্ত করে দেখুক। তদন্তে প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেবে। উপজেলা শিক্ষা অফিস ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম অনীক চৌধুরী বলেন, আমি বিষয়টা খতিয়ে দেখব। এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলব।
মন্তব্য করুন