প্লাস্টিক বাক্সে কাঁকড়া চাষ করে জীবন বদলে গেছে আব্দুল্লাহ আল মামুন সজিবের। কেশবপুরের সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদ পাড়ে ৯ বিঘা আয়তনের ঘেরে ৭৩ হাজার প্লাস্টিকের বাক্সে করা হচ্ছে শীলা সেরেটা জাতীয় কাঁকড়া চাষ। এই ঘেরের উৎপাদিত কাঁকড়া দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন রপ্তানি হচ্ছে চীন, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ায়।
উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন সজিব উপজেলার ব্যাসডাঙ্গা গ্রামের আবু তালেবের ছেলে। তিনি চাকরি করতেন যমুনা গ্রুপের করপোরেট এক্সিকিউটিভ পদে। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত এ যুবক গ্রামের মানুষের উন্নয়নে খামারির উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালের শেষে চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে মুরগির খামার ও ফলের বাগান করেন। কিন্তু মুরগির খামার ও ফলের বাগানে ভালো করতে না পারলেও মনোবল হারাননি। শেষে মাছ চাষের পাশাপাশি কাঁকড়া চাষের উদ্যোগ নিয়েই সফলতা পেয়ে যান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কপোতাক্ষ নদের ধারেই সজিবের ঘেরের পানিতে ভাসমান ছোট ছোট ৭৩ হাজার প্লাস্টিকের বাক্সে শীলা সেরেটা জাতীয় কাঁকড়ার চাষ করা হয়। এই ঘেরে গত ৩ বছর ধরে দুটি গ্রেডের কাঁকড়া চাষ করেন তিনি। সজিবের ৯ বিঘার ঘেরের ৫ বিঘাতে ৭৩ হাজার বাক্সে চাষ হচ্ছে সফট সেল কাঁকড়া এবং ৪ বিঘাতে সনাতনী পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে হার্ড সেল কাঁকড়ার। কাঁকড়ার খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ২ মণ তেলাপিয়া মাছ কেটে খাওয়ানো হয়।
কপোতাক্ষ নদের কাঁকড়াসহ এখানে নোয়াখালী, মুন্সিগঞ্জ, কপিলমুনি, পাইকগাছাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁকড়া এনে চাষ করছেন তিনি। বাক্সে কাঁকড়া ঢোকানোর ৩ ঘণ্টার মধ্যেই খোলস শুরু হয়। এরপর ২৫ দিনের পরিচর্যা শেষে তা পুরাপুরি গ্রেডিংয়ে পরিণত হয়। তার চাষ করা কাঁকড়া যাচ্ছে দেশের পাঁচ তারকা হোটেলসহ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মালয়েশিয়ার মত দেশে। এর মাধ্যমে তিনি যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন, ঠিক তেমনি তার কাঁকড়ার ঘেরে ২৪ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।
তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন সজিব কালবেলাকে বলেন, কাঁকড়া বহন করা ফ্রিজিং গাড়ি চলে আসে ঘের পারে। ক্রেতারা ঘের থেকে বাছাই করা গ্রেডিং কাঁকড়া ওই ফ্রিজিং গাড়িতে করে নিয়ে যায়। প্রতি কেজি কাঁকড়া ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এ কাঁকড়া শুধু মাত্র পাঁচ তারকা হোটেলে বিক্রি ও বিদেশে রপ্তানি করা হয়। স্থানীয় খোলা বাজারে বিক্রি করা হয় না। ঘের থেকে যেমন কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে, তেমনিভাবে বিভিন্ন নদী থেকে ধরা বিভিন্ন গ্রেডের কাঁকড়া এনে ঘেরে দেয়া হয়।
তিনি জানান, এ ঘেরে একজন ম্যানেজার ও একজন সুপারভাইজার ছাড়াও ২২ জন শিক্ষার্থী খণ্ডকালীন কাজ করেন। এখানে কাজ করে তারাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তার উৎপাদিত কাঁকড়ার বিশ্বব্যাপী চাহিদা রয়েছে। এবার তিনি জাপানে কাঁকড়া রপ্তানি করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ব্যাপারে জাপানি এক্সপোর্টধারীদের সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী কোরবানির ঈদের পরেই সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদ পার থেকে সরাসরি জাপানে কাঁকড়া রপ্তানি করতে পারবেন।
এ বিষয়ে কেশবপুর জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, মূলত এ ঘেরটি সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদ পারের কেশবপুর ও তালা উপজেলার মানুষের জমিতে তৈরি করা হয়েছে। ছোট ঘের হলেও প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার কাঁকড়া রয়েছে এ ঘেরে। ২২ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়ার পাশাপাশি কাঁকড়া ঘেরে খণ্ডকালীন কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, এ ঘেরের উৎপাদিত কাঁকড়া বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অসংখ্য বেকার যুবক কপোতাক্ষ নদ পারে এ ধরনের কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
মন্তব্য করুন