ব্যাপক সমালোচনার পর কক্সবাজার সৈকতে তৈরি করা কৃত্রিম খালটি ভরাট করেছে প্রশাসন। শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ তিন ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে কলাতলি ডিভাইন পয়েন্টের কৃত্রিম খালটি ভরাট করে দেয়। এতে করে সৈকতের স্বাভাবিক অবয়ব ফিরে এসেছে।
এ ঘটনায় জড়িত ডিভাইন ইকো রিসোর্ট ও বিচ প্যাসেফিক লাউঞ্জ রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ কক্সবাজারের সচেতন মহল।
জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের বাণিজ্যিক দুটি প্রতিষ্ঠান মিলে বালিয়াড়ি কেটে কৃত্রিম খাল তৈরি করে। এ খালটি সৈকতের প্রাকৃতিক পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে বালির বাঁধ তৈরি করে নিজেদের সুবিধামতো খনন করে অসাধু চক্রটি, যা সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করে। তীব্র ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয় এবং হোটেল-মোটেলের ময়লা-আবর্জনা ও পয়ঃনিষ্কাশনের পানিতে ভয়াবহ দুর্গন্ধ ছড়ায় সৈকতে। এতে কক্সবাজার সৈকতের পরিবেশ, পর্যটক নিরাপত্তা এবং সৈকতের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ে।
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সৈকত রক্ষায় কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বরং ভ্রাম্যমাণ দোকান বরাদ্দ ও বিক্রির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। অথচ নিরাপদ সৈকত রক্ষার জন্য কোনো সংস্কার কার্যক্রমে তাদের কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। সচেতন মহলের প্রশ্ন, দোকান বিক্রির টাকা নিচ্ছে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি, তাহলে সৈকত সংস্কার করবে কেন কক্সবাজার পৌরসভা বা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ?
শুক্রবার রাতে সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট সংলগ্ন ডিভাইন ইকো রিসোর্ট পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, কৃত্রিম খালটি কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ভেকু দিয়ে ভরাট করছে। তিন ঘণ্টার অভিযানের পর স্বাভাবিক অবয়ব ফিরে আসে সৈকতের।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষার পানি প্রাকৃতিক ছড়া দিয়ে সাগরে মিশলেও প্যাসিফিক ক্যাফে কর্তৃপক্ষ ছড়া বন্ধ করে বালির বাঁধ তৈরি করে। ফলে ডিভাইন ইকো রিসোর্টের সামনে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য বালিয়াড়ি কেটে কৃত্রিম খাল খনন করা হয়। এ খালটি এখন জোয়ার-ভাটার প্রভাবে আরও বড় হচ্ছে, সৈকতের একটানা বালিয়াড়ি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে, যা সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি ছিল।
সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজারের সভাপতি নুরুল ইসলাম হেলালী কালবেলাকে বলেন, দুটি প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত স্বার্থে এ কৃত্রিম খাল তৈরি করে। ফলে ময়লাযুক্ত পানি সাগরে মিশে পরিবেশ দূষণ করছে। ভারি বর্ষণে খাল আরও বড় হয়ে পর্যটকের স্নানে প্রতিবন্ধকতা ও প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়াচ্ছিল।
সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র কর্মী সিফাত বলেন, সাম্প্রতিক বর্ষায় সৈকতে গর্ত ও গুপ্তখালের কারণে ৮ পর্যটক মারা গেছেন। কৃত্রিম খাল পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলছে, যা পর্যটকদের জন্য প্রাণঘাতী ফাঁদে পরিণত হতে পারে।
ডিভাইন ইকো রিসোর্টের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সেলিম দাবি করে বলেন, প্রাকৃতিক পানি চলাচলের পথ বন্ধ হওয়ায় আমাদের সীমানা ভাঙনের মুখে পড়েছে। বিকল্প পথে পানি গেলেও খাল খননে আমরা জড়িত নই।
কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী মুর্শেদ বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সৈকতে করা কৃত্রিম খালটি ভরাট করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আমাদের অবকাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে। কক্সবাজারে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট দরকার। হেলদি শহর গড়তে সবকিছু নতুন করে ভাঙতে হবে, সাজাতে হবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, সৈকতের দেখভালের দায়িত্ব পৌরসভা ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। তবে কেউ অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে জেলা প্রশাসন সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
মন্তব্য করুন