রংপুরে গিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, সব ধরনের ক্রিকেটে রংপুর চ্যাম্পিয়ন, অথচ মাঠের দশা বেহাল!
শনিবার (২৮ জুন) রংপুর ক্রিকেট গার্ডেন পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় তিনি বলেন, এখানে হাজার হাজার মেধাবী ক্রিকেটার রয়েছে। কিন্তু তাদের বিকাশের সঠিক পথ আমরা কতটুকু তৈরি করে দিতে পেরেছি আমি জানি না। তার একটা উদাহরণ হলো এই মাঠেই আমি একসময় ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলেছি। আমি দুঃখিত বলব- আজ এসে মাঠের যা অবস্থা দেখলাম! পিচ দেখার সুযোগ হয়নি এখনো, তবে ইমপ্রুভমেন্টের অনেক জায়গা আছে।
তবে হতাশার মাঝেও আশার আলো দেখিয়েছেন তিনি। ঘোষণা দিয়েছেন, রংপুরে গড়ে তোলা হবে বিসিবির ‘ছোট সংস্করণ’— যা রংপুর অঞ্চলেই কোচ, আম্পায়ার, পিচ ও ক্রিকেটের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করবে।
টেস্ট ক্রিকেটে মর্যাদা লাভের ২৫ বছরপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে শনিবার সকাল ১১টার দিকে রংপুর ক্রিকেট গার্ডেনে গিয়ে ক্রিকেট নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা জানান বিসিবির নতুন সভাপতি।
বিসিবি সভাপতি সোজাসাপ্টা বলেন, ক্রিকেট আর শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক থাকবে না, দেশের সব অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে চাই আমরা। রংপুরে এমন একটি কাঠামো গড়ে তুলব। যেখানে পিচ, আম্পায়ার, কোচসহ সবকিছু থাকবে রংপুরের নিয়ন্ত্রণে। একটি ছোট্ট ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড’ এখানে স্থাপন করব, যার কাছে আপনারা আপনার সব অভিযোগ, সাফল্য এবং গল্প বলবেন। তারপর আমরা সরাসরি এখান থেকে শুনব।
তিনি জানান, টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছর উপলক্ষে বিসিবি ক্রিকেটকে ‘ডিসেন্ট্রালাইজ’ করতে যাচ্ছে। রাজশাহী ও রংপুর নিয়ে তৈরি হচ্ছে একটি জোন। এই জোনেই হবে মেয়েদের ক্রিকেট, প্রিমিয়ার লিগ, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা কার্যক্রম।
রংপুর ক্রিকেট গার্ডেনের ফাঁকা জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে বড় মেলার আয়োজন হয়। একই সঙ্গে খেলোয়াড়রা এই স্থানটিকে ইনডোর প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটির জন্য ব্যবহার করার দাবি জানিয়ে আসছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছে, তারা শুধু চেষ্টা করবে না, প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।
বিসিবি সভাপতি জানান, একটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার নির্মাণে সময় লাগতে পারে, তবে এটি আমাদের অগ্রাধিকার। যত দ্রুত সম্ভব এখানে এমন একটি ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলা হবে, যা কেবল ক্রিকেট অনুশীলনের জায়গা নয় বরং ক্রিকেটের সংস্কৃতি গড়ে তোলার কেন্দ্রবিন্দু হবে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে মেধার যথাযথ প্ল্যাটফর্ম না থাকায় তীব্র আক্ষেপ করে বুলবুল বলেন, ‘গত ২১ বছরে মাত্র তিন-চারটা লিগ হয়েছে। কত ক্রিকেটারের স্বপ্ন যে ধ্বংস হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। শুধু অবকাঠামো নয়, কালচারই তৈরি হয়নি। প্রোপার ট্রেনিং, কোচিং ও এডুকেশন দিয়ে ভালো কোচ তৈরি করব। কোচই তৈরি করবে পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেটার।
পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যখন এই জোনটি করব, তখন প্রত্যেক জেলা ক্রিকেট বোর্ডে একজন করে কোচ থাকেন। তাদের প্রধান কাজ হবে উপজেলা পর্যায়ে ঘুরে ঘুরে নতুন মেধা খুঁজে বের করা। হয়ত সব উপজেলায় বড় কোনো লীগ হবে না কিন্তু আমরা উপজেলা থেকে ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন ক্রিকেটারদের সুযোগ দিতে চাই।
রংপুরে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়ামের দাবি দীর্ঘদিনের। তবে এ নিয়ে কোনো সরাসরি প্রতিশ্রুতি দেননি বিসিবি সভাপতি। শুধু বলেন, এটা অবশ্যই দরকার কিন্তু এটি শুধু বিসিবির বিষয় নয়, সরকারের অনেক কিছু জড়িত। আমি গুরুত্ব দিচ্ছি, তবে কমিটমেন্ট এখনই দিতে পারছি না।
টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছর উপলক্ষে রংপুর ক্রিকেট গার্ডেন নানা আয়োজন করেছে বিসিবি। এরমধ্যে অনুর্ধ্ব-১২ ক্রিকেট ফেস্টিভ্যাল ক্ষুদে ক্রিকেটারদের জন্য সিক্স-এ-সাইড ক্রিকেট উৎসব, বোলারদের জন্য গতির পরীক্ষা, অভিভাবকদের জন্য ‘বেসিক ক্রিকেট কোচিং, টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলোর ওপর ধারাভাষ্য, হিট দ্য স্ট্যাম্পে সরাসরি আঘাত, টেস্ট ক্রিকেট বিষয়ক ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা, বাংলাদেশ দলের জন্য শুভকামনা জানানোর বিশেষ বোর্ড।
এসময় রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আশরাফুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রমিজ আলম, বিসিবি সভাপতির উপদেষ্টা আবিদ হাসান সামি, বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট অধিনায়ক নীগার সুলতানা, সাবেক ক্রিকেটার নাসির হোসেন, জেলা ক্রীড়া অফিসার মাসুদ রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন