শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গাড়ো পাহাড় থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির প্রতিবাদ করায় চোরাকারবারিদের আক্রমণে গুরুতর আহত হয়েছেন জুলাই যোদ্ধা মো. আরিফ রেজা (২১)। তিনি বর্তমানে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শুক্রবার (২৭ জুন) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া এলাকার মেঘাদল বাজার এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
জানা যায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের প্রতিবাদ করায় বালুদস্যু বিপ্লব ও তার অনুসারীদের হাতে নির্যাতনের এ ঘটনায় জেলাজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মো. আরিফ (২১) বাদী হয়ে শ্রীবরদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
আহত জুলাই যোদ্ধা আরিফ উপজেলার গোসাইপুর ইউনিয়নের গিলাগাছা গ্রামের মো. রজব আলী ছেলে।
আর অভিযোগে আসামিরা হলেন- মো. বিপ্লব মিয়া (৪০), মো. রুমান (৩৩), মো. রমজান (২৭), মো. মোশারফ (৩৬), মো. ইউনুছ মহাজনের ছেলে মো. ইস্রাফিল (২৮), সোহাগ (২৬), মো. ইউসুফ আলী (৩৪), মো. নয়ন (২৭), মো. ইদ্রিস আলী (৩৭), মো. আলমাছ খান বাহাদুর (৩২), মো. স্বপন মিয়া (২৬) ও মো. মোস্তফা (৩০)।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া এলাকায় প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করায় বারবার বাধা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। এর আগে বেশ কয়েকবার তারা বিভিন্ন স্থানে বালুর গাড়ি আটক করে প্রশাসনের নজরে এনেছেন। এদিনও অবৈধ বালু উত্তোলন হচ্ছে কিনা দেখার জন্য গিয়ে কর্ণঝোড়া শয়তান বাজারে ২টি মাহেন্দ্র ট্রাক্টর দিয়ে বালু নিতে দেখতে পান। এসময় আরিফসহ অন্যরা ট্রাক দুটি থামিয়ে ড্রাইভারকে বালুর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে বালুগুলো বাবেলাকোনা এলাকা থেকে উত্তোলন করে তা বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। রাষ্ট্রীয় সম্পদ অবৈধভাবে পাচার হচ্ছে দেখে তারা বিষয়টি শ্রীবরদী থানা পুলিশসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) অবগত করেন। এর পরেই ঘটে বিপত্তি।
এদিকে এ খবর পেয়ে বিপ্লব ও তার অনুসারীরা চারদিক থেকে আরিফসহ অন্যদের ঘেরাও করে প্রথমে গালাগাল করে। পরে কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে গুরুতর আহত করে। এসময় আরিফ অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে এলাকাবাসীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তারপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এসব ঘটনা নিয়ে আহত আরিফ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ডান হাতের কনুইয়ে ও বুকে গুলিবিদ্ধসহ শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ২৫০ এর অধিক ছররা গুলি নিয়ে বেঁচে আছি। মৃত্যুর জন্য ভয় পাই না। বিপ্লব একাই পাহাড় ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই সিন্ডিকেটটি দীর্ঘদিন যাবত পাহাড়ি বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করছে। আমি বাধা দিয়ে আহত হলাম। আমি এর বিচার চাই এবং সম্পূর্ণরূপে বালু উত্তোলন বন্ধ চাই।
শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফুর রহমান কালবেলাকে বলেন, গায়ে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েছি। কিন্তু তার আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তাই তাকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার জাহিদ কালবেলাকে বলেন, আমি নিজে হাসপাতালে গিয়ে আহতের সঙ্গে কথা বলেছি। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। তবে অপরাধী কেউ ছাড় পাবে না।
মন্তব্য করুন