সোহাইবা আক্তার রাফার বয়স এখন আট মাস। মাতৃস্নেহে মুখে কেবল কথা ফুটতে শুরু করেছে। কিন্তু অবুঝ এই শিশু জানে না বাবাকে সে হারিয়ে ফেলেছে। ফুটফুটে এই শিশু যখন মায়ের গর্ভে আট মাস তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে তার বাবা সোহেল রানা (২৭) শহীদ হয়েছেন।
সরেজমিন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের বড় গোপালপুর গ্রামে দেখা যায়—মায়ের কোলে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে দেখছে শিশুটি। এ সময় শিশুর মা রোকেয়া আক্তার সাম্মী (২২) তার স্বামী হারানো শোক আর কোলের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম হতাশার কথা জানান।
সাদুল্লাপুরের বড় গোপালপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার সরকারের মেয়ে রোকেয়া আক্তার সাম্মীর সঙ্গে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভুসকুর মাদ্রাসাপাড়ার ফেরদৌস রহমানের ছেলে সোহেল রানার বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনের কিছুদিন পর সাম্মী আক্তার যখন অন্তঃসত্ত্বা, তখন ঢাকার একটি সিকিউরিটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন সোহেল।
এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল, তখন সোহেল রানাও ঝাঁপিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনা পতনের একদফা আন্দোলনে গিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সোহেল। এরপর ৬ আগস্ট ভুসকুর মাদ্রাসাপাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
তখন থেকে শ্বশুর-শাশুড়ির অবহেলার শিকার হন সাম্মী আক্তার। বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি সাদুল্লাপুরের বড় গোপালপুরে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় আট মাস আগে ফুটফুটে একটি মেয়েসন্তান জন্ম দেন তিনি।
এ বিষয়ে সাম্মী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আন্দোলনে গিয়ে আমার স্বামী পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনার দুই মাস পর আমার কোলজুড়ে জন্ম নেয় কন্যা সোহাইবা আক্তার রাফা। সে এখনো বোঝে না জন্মের আগেই তার বাবাকে হারিয়েছে।
সাম্মীর বাবা আব্দুস সাত্তার সরকার বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আমার জামাই সোহেল রানা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। জুলাই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্নভাবে বগুড়া জেলা থেকে সাম্মী আর্থিক সুবিধা পেয়েছে; কিন্তু গাইবান্ধা জেলা থেকে প্রশাসন কিংবা কোনো রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি আমার মেয়ে ও নাতনির খোঁজ রাখেনি।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জুলাই যোদ্ধা-২৪ সংগঠনের সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, বড় গোপালপুর গ্রামের সাম্মীর ব্যাপারটি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।
মন্তব্য করুন