প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিজি-১৩৮। এরপর রানওয়ে-২৩ প্রান্তে গিয়ে ইউটার্ন নেওয়ার সময় ধরা পড়ে যান্ত্রিক ত্রুটি। জ্যাম হয়ে যায় চাকা, মাঝপথেই আটকে যায় বিমান।
তবে বিমানের সেন্সর অ্যালার্ম বাজায় বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারেন পাইলট। তাৎক্ষণিক বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালে টাগকারের (টোইং ভেহিকল) মাধ্যমে রানওয়ে থেকে সরিয়ে এপ্রোনে নেওয়া হয় বিমানটি। এতে প্রায় দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল বিমান চলাচল। পরে যেসব ফ্লাইট চলাচল করেছে তাতে হয়েছে বিলম্ব।
যাত্রীদের অভিযোগ, অল্পের জন্য বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন ৩৮৭ যাত্রী। বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের অবহেলার কারণে ঘটতে পারত বড় দুর্ঘটনা। যে চাকার ত্রুটি বিমানবন্দরে অবতরণ হওয়ার পর হয়েছে, তা যদি মাঝ আকাশে কিংবা অবতরণের আগে হতো- তখনই বড় প্রাণহানির শঙ্কা ছিল। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি স্বাভাবিক বিষয়। গত বছরও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। তবে প্রাণহাণি কিংবা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
জানা গেছে, সৌদি আরবের মদিনা থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ (বিজি-১৩৮) শনিবার (৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামে অবতরণ করে। রানওয়ে-২৩ প্রান্তে পৌঁছানোর পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি আটকে পড়ে, ফলে রানওয়ের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। উড়োজাহাজটিতে প্রায় ৩৮৭ হজযাত্রী ও প্রবাসী যাত্রী রয়েছেন।
পবিত্র হজ পালন শেষে উড়োজাহাজটিতে ফিরছিলেন চট্টগ্রামের মোহাম্মদ নামের এক যাত্রী। তিনি জানান, সৌদি আরবের মদিনা থেকে উড়োজাহাজটি শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় উড্ডয়ন করে। চট্টগ্রামে সকাল সোয়া ৯টায় অবতরণ করে। তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। উড়োজাহাজটি অবতরণের পর ইউটার্ন নেওয়ার সময় রানওয়ের মাঝপথে আটকে যায়। দুই ঘণ্টা ধরে উড়োজাহাজে বসে ছিলাম। আমরা খুব আতঙ্কিত হই তখন।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, রানওয়ে ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকায় ১টি আন্তর্জাতিক এবং ৩টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের সময় বিলম্বিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সালাম এয়ারের মাস্কাটগামী একটি উড়োজাহাজ (ফ্লাইট-৪০২) ৩ ঘণ্টা ৮ মিনিট দেরিতে ১১:৫৩টায় চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়। এর আগে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট (বিজি-৬১২) ঢাকার উদ্দেশ্যে ৪৭ মিনিট বিলম্বে ৯টা ৫৭ মিনিটে ছেড়ে যায়। অন্যদিকে ঢাকা থেকে আগত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিএস-১০৫ (ঢাকা থেকে একচুয়াল ডিপার্চার টাইম ছিল ৯:৩০) এবং এয়ার আস্ট্রার ফ্লাইট-৪১৫ (ঢাকা থেকে একচুয়াল ডিপার্চার টাইম ছিল ১০টা ৩০ মিনিট) বিলম্বে যাত্রা করে দুপুর ২টার পর চট্টগ্রামে এসে পৌঁছায়।
বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল বলেন, বিমানটি নামার পরই যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় রানওয়ে সাময়িক বন্ধ থাকলেও বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ফ্লাইটে থাকা সব হজযাত্রীই নিরাপদে আছেন।
তিনি বলেন, রানওয়ে-২৩ প্রান্তে পৌঁছানোর সময় বিমানের চাকা জ্যাম হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সেন্সর অ্যালার্ম বাজার পর পাইলট বিষয়টি খেয়াল করেন। এরপর বেলা ১১টা ২০মিনিটে বিমানটিকে টাগকারের (টোইং ভেহিকল) মাধ্যমে রানওয়ে থেকে সরিয়ে এপ্রোনে নেওয়া হয়। এটি সামান্য ত্রুটি, যা অল্প সময়ের মধ্যেই সারানো হয়। বিমানটি দুপুর দুইটায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এবিএম রওশন কবির কালবেলাকে বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটি হয়েছে বলেই জেনেছি। তবে সেটি খুব মারাত্মক ছিল না। যে কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা সারানো গেছে। উড়োজাহাজটি দুটায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে সঠিক সময়ে ভালোভাবেই গন্তব্যে পৌঁছেছে।
প্রত্যেকটি বিমানই ছাড়ার পূর্বে সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বিমানের প্রত্যেকটি ফ্লাইটই ছাড়ার আগে ভালোভাবে তদারকি করা হয়। এটি একটি নিরাপদ মাধ্যম। ফলে ঝুঁকির কোনো অবকাশই নেই।
মন্তব্য করুন