শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত জাজিরা উপজেলার মাঝিকান্দি সাত্তার মাদবর হাট এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার মাধ্যমে কাজ শুরু করেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাঙনকবলিত এলাকায় প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০০ শ্রমিক ও দুটি বার্জের সাহায্যে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ করেই মাঝিরঘাট এলাকায় পদ্মার প্রবল ভাঙনে পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এ সময় আশপাশের ১০টি বসতঘর ও ৯টি দোকানঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। দ্রুতগতিতে ভাঙন ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়দের অনেককেই তাদের দোকানপাট ও বসতঘর সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুর ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকায় রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর বাঁধের একটি অংশ ধসে পড়ে। পরবর্তী সময়ে বাঁধ সংস্কারের দায়িত্ব পায় পাউবো। তারা প্রায় ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু করে। তবে চলতি বছরের কোরবানির ঈদের দিন ভোরে আবারও বড় ধস নামে, যেখানে প্রায় ২৫০ মিটার বাঁধ পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। সেই ধসে আরও ১৩টি বসতঘর ও দুটি দোকানঘর হারিয়ে যায়।
এর পরে মঙ্গলবার সকালে পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওয়াহিদ হোসেন, জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায়, ফরিদপুর পাউবোর প্রধান প্রকৌশলী শাজাহান সিরাজ, শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসানসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, আমরা সকাল থেকে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছি। প্রায় ১০০ শ্রমিক নিরলসভাবে কাজ করছেন। নদীর প্রবল স্রোত ও তীব্রতা বিবেচনায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
উপজেলা প্রশাসন এরই মধ্যে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ২৬টি পরিবারের তালিকা করেছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার দুপুরে ১০ পরিবারকে টিন এবং নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ইউএনও কাবেরী রায় বলেন, ভাঙনে এ পর্যন্ত ১০টি বসতঘর ও ৯টি দোকানঘর নদীতে তলিয়ে গেছে। সোমবার রাতেই ৩০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ২৬টি পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করে ১০টি পরিবারকে তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’
ভাঙনে আতঙ্ক বিরাজ করলেও প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ নেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে এলাকাবাসীর মধ্যে। তবে এলাকাবাসীর দাবি, স্থায়ী সমাধানের জন্য রিভেটমেন্টসহ টেকসই বাঁধ নির্মাণের।
মন্তব্য করুন