বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৃথক চারটি অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুদকের ফেসবুক পেজে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
দুদক জানায়, রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে লোকবলের অপ্রয়োজনীয় পদায়ন, অর্থপাচার এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সেবাক্রয়ের কার্যাদেশ প্রদানে অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) প্রধান কার্যালয়ে মঙ্গলবার একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়।
অভিযান চলাকালে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে এনফোর্সমেন্ট টিম বিআইএফপিসিএলে বর্তমানে কর্মরত বাংলাদেশি এবং বিদেশি লোকবল সংক্রান্ত তথ্য, কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাদি সংক্রান্ত পে-স্লিপ, প্রকিউরমেন্ট সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র এবং চুক্তিপত্রসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। প্রাথমিক পর্যালোচনায় এক্ষেত্রে অসম চুক্তি সাধিত হয়েছিল মর্মে এনফোর্সমেন্ট টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এসব রেকর্ডপত্র পূর্ণাঙ্গরূপে পর্যালোচনাপূর্বক এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঠিকাদারদের কাছ থেকে পশু-পাখির ওষুধ ও ভিটামিন-মিনারেল সম্পূর্ণরূপে সরবরাহ না পেয়েই ১৭ কোটি টাকার বিল পরিশোধপূর্বক রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে আরেকটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে প্রকল্প সংক্রান্ত আংশিক রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে পুরান ঢাকার আলাউদ্দিন রোডের নাজিরাবাজার এলাকার স্টোররুমে সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক স্টকসমূহ মিলিয়ে দেখে এনফোর্সমেন্ট টিম।
অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণের পাশাপাশি বর্ণিত টেন্ডার প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ রেকর্ডপত্র সরবরাহ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়ে। রেকর্ডপত্র পূর্ণাঙ্গরূপে যাচাইপূর্বক এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
রাজধানীর বাইরে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন রাঙ্গামাটি সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের শুরুতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুজন নিরপেক্ষ প্রকৌশলীসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মাণাধীন ভবনসমূহ পরিদর্শন করা হয়। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয়ে টেন্ডারসংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনায় একাধিক অসংগতি পাওয়া যায়। বিস্তারিত যাচাইয়ের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। যাচাইকৃত তথ্য ও নথিপত্র বিশ্লেষণ করে কমিশনে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এছাড়াও যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলায় রাস্তা নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, যশোর হতে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে এলজিইডি, কেশবপুর কার্যালয় কর্তৃক ‘কাশিমপুর ওয়াপদা থেকে গৌরীঘোনা ঈদগাহ পর্যন্ত’ ২.৪৫ কিমি দীর্ঘ রাস্তার নির্মাণ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয় এবং নিরপেক্ষ প্রকৌশলী, ঠিকাদারের প্রতিনিধি ও এলজিইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা হয়।
পরিদর্শনে প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইটের খোয়া এবং বালি-খোয়ার অনুপাতে খোয়া কম ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৪০ দিন মেয়াদি প্রকল্পটির কাজ ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো সম্পন্ন হয়নি। ফলে নির্মাণে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা শেষে কমিশনে সুপারিশসহ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
মন্তব্য করুন