সিলেট সদর উপজেলার মইয়ারচরের এক শিক্ষক ভুয়া তথ্য দিয়ে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করেছেন। অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম আকবর হোসেন রাজা। তিনি মৃত কনু মিয়ার ছেলে। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করতে তিনি একটিও সঠিক তথ্য দেননি। নিজেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে বহাল রাখার জন্য নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম সাল চার বছর কমিয়ে সংশোধন করেছেন।
২০১৩ সাল পর্যন্ত তার জন্ম সাল ছিল ১৯৬৫। পরে কাগজপত্রে তা বদলে ১৯৬৯ দেখান। চলতি বছরের মে মাসে এনআইডিতে এই পরিবর্তন করেন। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও তিনি স্কুলের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। জমির মালিক মাছুম আহমদ থানায় সাধারণ ডায়রি করেন।
মইয়ারচরে এই জুনিয়র হাই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় এটি পরিচালিত হয়। জমি-সংক্রান্ত শর্ত পূরণ না হওয়ায় দীর্ঘদিন এটি এমপিওভুক্ত হয়নি। পরে আকবর হোসেন রাজা ভুয়া দলিল তৈরি করে এমপিওর আবেদন করেন। তার দেওয়া সব তথ্য ছিল মিথ্যা। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সুপারিশে ২০২২ সালে স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়। তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অভিজিৎ পাল এতে অনিয়মে যুক্ত ছিলেন। আবেদনপত্রে বলা হয়, স্কুলে তিনটি ভবন আছে, অথচ বাস্তবে আছে দুটি।
বিদ্যালয় যে জমিতে স্থাপিত, তা ব্যক্তি মালিকানাধীন। জমির পরিমাণ ৭৫ শতক বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে আছে ৩০ শতক। ওই জমির মালিক মৃত তৈয়ব আলীর ছয় সন্তান, যাদের একজন মাছুম আহমদ। তারা হাইকোর্টে মামলা করেন (সিভিল রিভিশন নং ১০২৬/২০১৯)। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন, জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ বা শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।
জমি দখলের অভিযোগে মাছুম আহমদ বলেন, তার পিতা বিদেশে থাকায় প্রধান শিক্ষক জোরপূর্বক জমিতে স্কুল নির্মাণ করেন। মামলা ও অভিযোগ করলেও তিনি হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে ভবন নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
২০২৩ সালের ১ অক্টোবর শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এমপিও-সংক্রান্ত এক অফিস আদেশ জারি হয়। তাতে বলা হয়, ভুল, মিথ্যা তথ্য কিংবা ভুয়া সুপারিশ দিলে এমপিও বাতিল করা হবে।
সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর এলাকাবাসী স্কুলের ধারে কাছেও যেতে পারেননি। প্রধান শিক্ষক ইচ্ছামতো প্রতিষ্ঠান চালিয়েছেন। তিনি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার অভিজিৎ পাল কালবেলাকে বলেন, এমপিওর প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক। ভুল তথ্য দেওয়া অন্যায় এবং কেউ অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল ওয়াদুদ কালবেলাকে বলেন, এমপিও অনুমোদনের আগে শিক্ষাবোর্ড সব কিছু যাচাই করে। যথাযথ কাগজপত্র ছাড়া অনুমোদন দেওয়া হয় না। তবে কেউ অনিয়ম করলে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।
স্কুল প্রধান আকবর হোসেন বলেন, জমি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে মামলা চলছে। তিনি বহু মামলায় রায় পেয়েছেন। ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার ভবন নির্মাণ করে দিলে তার কিছু করার নেই। জন্ম সাল পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, অফিসের মাধ্যমে তদবির করে সংশোধন করিয়েছেন এবং এতে কারও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
মন্তব্য করুন