বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২
শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৫, ০২:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘সবাই বলে দুইটা বাচ্চা বেইচা দিতে, মা হয়ে কি বেচতে পারি’

তিন শিশুকে নিয়ে বিপাকে পরিবার। ছবি : কালবেলা
তিন শিশুকে নিয়ে বিপাকে পরিবার। ছবি : কালবেলা

‘সবাই বলে দুইটা বাচ্চা বেইচা দিতে। বাকি একটা লালনপালন করতে। কিন্তু মা হয়ে কি বেচতে পারি? প্রায় এক মাস হলো তিন বাচ্চার জন্ম হয়েছে। কোনো খাবার ও ওষুধ কিনতে পারছি না। এদিকে সিজারের ৪০ হাজার টাকা ঋণ। এই টেহার ব্যবস্থা কেমনে হব। পোলাপানডি বাঁচাতে পারব কি না আল্লাহই ভালো জানে।’

চোখের পানি মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন সদ্য তিন সন্তান জন্ম দেওয়া অসহায় মা নাছিমা আক্তার (২০)। স্বামী লিখন মিয়া ঢাকায় রিকশা চালান। লিখন শেরপুর সদর উপজেলার লসমনপুর ইউনিয়নের দিঘলদী মোল্লাপাড়া এলাকার চাম্পা আলীর ছেলে।

গত ১৪ জুন শেরপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে দুই ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম দেন নাছিমা। বর্তমানে শিশুগুলো খাবার ও ওষুধের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। বুকের দুধে মিটছে না খাবারের চাহিদা। দুধসহ ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি। রিকশাচালক লিখন মিয়ার সঙ্গে নাছিমা আক্তারের বিয়ে হয় দুই বছর আগে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, নাসিমার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে পুরো পরিবারে নেমে আসে আনন্দ। সংসার চালিয়ে দশ মাসে স্ত্রী-সন্তানের জন্য টাকা সঞ্চয় করেন মাত্র ৫ হাজার। এদিকে ডাক্তার বলেন- তার পেটে একটি দুটি নয় তিন তিনটি বাচ্চা। এদিকে তিনটি বাচ্চা পেটে থাকায় নাছিমার শুরু হয় নানা শারীরিক জটিলতা। অবশেষে শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেয় দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের।

এতে খরচ হয়ে যায় ৪০ হাজার টাকা। ধারদেনা করে অপারেশন করলেও পাওনাদারের টাকার চাপে সন্তান ফেলে লিখন আবার চলে যান ঢাকায় রিকশা চালাতে। পরে তিন বাচ্চাকে নিয়ে ভাঙা ঘরে ওঠার জায়গা না থাকায় লিখনের বড় ভাই গার্মেন্টসকর্মী খোকনের ঘরে ওঠেন তারা।

শিশুটির দাদি খোরশেদা বেগম বলেন, খাওয়ার অভাবে বাচ্চা তিনটা শুকিয়ে যাচ্ছে। ওষুধ কিনতে পারছি না। পুষ্টিহীনতায় ভুগছে মা নাছিমাও। তার জন্যও ওষুধ কিনতে পারছি না। কীভাবে তিনটি শিশু পালব। শিশুদের ওষুধ, খাবার ও ডাক্তার খরচসহ ঋণের টাকা পরিশোধে সরকার ও বিত্তবানদের সহায়তা চাই।

শিশুর দাদা বলেন, ‘আল্লাহ তো তিনটা বাচ্চা দিছে, কিন্তু টাকা তো দেয় নাই। ঋণের টাকা কেমনে পরিশোধ করব। পুলাপানগুলা পালব কীভাবে। পুলাডা ঢাকা গেছে টেহা কামাইতে। এদিকে পুলাপানগুলা না খাইয়া আছে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, এদের মতো গরীবের ঘরে তিন সন্তান যেন বোঝা হয়ে গেছে। শিশুগুলোর পরিচর্যা ঠিকমতো না হলে ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। তাদের ভরণপোষণে সরকারের সহযোগিতার প্রয়োজন। এ ছাড়াও পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা সম্ভব সেটা করা হবে।

শেরপুর সদর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, শিশুদের লালনপালনের জন্য শেল্টারহোম রয়েছে। এ ছাড়াও ৬ বছর বয়স থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত আরও একটি বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুর পরিবার যদি অসমর্থ হয় তাহলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও শর্তাবলি মেনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে অবগত হলাম। শিশুর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শাহবাগে এসে ডিএমপি কমিশনারের ‘দুঃখ প্রকাশ’

ইনকিলাব সম্পাদককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাল ছাত্রশিবির

বিএনপি নেতাকে কোপাল যুবলীগ নেতা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী হাটহাজারী বিমানবন্দর

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ডাকসু নির্বাচন / ১৩২ শিক্ষার্থীকে খাওয়ালেন প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা বললেন আচরণবিধি লঙ্ঘন

সাদাপাথর লুটপাট নিয়ে সিলেটে গণশুনানি

একাধিক উপকারিতা কাঠবাদামের, যাদের জন্য ক্ষতিকর

একই দিনে দুইবার পরিবর্তন, রাকসু নির্বাচনের নতুন তারিখ নির্ধারণ

পারকি সৈকতের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ

১০

জয়পুরহাটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুর্ধর্ষ চুরি

১১

হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের নামে প্রতারণা, সতর্ক থাকার নির্দেশ

১২

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের প্রচারণার ভিডিওতে থাকায় বিপাকে শেবাগ

১৩

ভারতের ছাড়া পানি থেকে বাঁচতেই বাঁধ উড়িয়ে দিল পাকিস্তান!

১৪

সিলেটে পানির জন্য হাহাকার, সড়ক অবরোধ

১৫

অপারেশনের পর জ্ঞান না ফেরায় রোগীর মৃত্যু

১৬

শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজারে ওরস বৃহস্পতিবার

১৭

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য পুলিশ ‘ক্ষমা’ চাইবে, জানালেন ফাওজুল কবির

১৮

নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শনে গেলেন উপদেষ্টা শারমিন মোরশেদ

১৯

বাবরকে নিয়ে মন্তব্য করায় হারিসকে লাঠি দিয়ে মারতে চান সাবেক পাক ক্রিকেটার

২০
X