জুলাই-আগস্টে ঢাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দুজন যুবদল এবং একজন ছাত্রদল কর্মী শহীদ হয়েছিলেন। এর মধ্যে একজন ১৯ জুলাই ঢাকার শাহজাদপুর বাজারে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন উপজেলার কালনা গ্রামের নজরুল খলিফার ছেলে যুবদল কর্মী ইমরান খলিফা এবং ২০ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ থানাধীন সাইনবোর্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের মৃত মহসিন সিকদারের ছেলে যুবদল কর্মী জামাল সিকদার।
এ ছাড়া ৪ আগস্ট ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের পশ্চিম শাওড়া গ্রামের ফারুক খানের ছেলে ছাত্রদল নেতা ইলিয়াস খান। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ চৌরাস্তা এলাকায় কর্মসূচি চলাকালে তার মাথায় গুলি লাগে। ছয়দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মৃত্যুর কাছে হার মানেন ইলিয়াস।
বুধবার (১৬ জুলাই) শহীদদের স্মরণে সভার আয়োজনে করে গৌরনদী উপজেলা ও পৌর বিএনপি।
স্মরণসভায় আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করতে গিয়ে আবেগাল্পুত হয়ে পড়েন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপির সাবেক সংসদ জহির উদ্দিন স্বপন। এ সময় সভাস্থলে উপস্থিত গৌরনদীর তিন শহীদ পরিবারের সদস্যরা অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহতের এক বছর অতিবাহিত হলেও স্বজনহারা শহীদ পরিবারের সদস্যদের কান্না আজও থামেনি।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে নিহত যুবদল কর্মী ইমরান খলিফার চাচা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামিম খলিফা বলেন, জাতির ক্রান্তিলগ্নে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমাদের পরিবার থেকে আমার ভাতিজা যুবদল কর্মী ইমরান দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। সে শহীদ হলেও তার রক্তের বিনিময়ে গোটা জাতি যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেছে এটাই আমাদের বড় প্রত্যাশা।
তিনি আরও বলেন, নিহত ইমরানের স্ত্রী আছে, তার একটি অবুঝ শিশু রয়েছে। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সরকারের কাছে একটাই প্রত্যাশা ইমরানকে শহীদের মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি তার স্ত্রী-সন্তানকে সামাজিক সুরক্ষা তথা রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই : ২০ জুলাই বিকেলে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে নিহত হন গৌরনদীর হোসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা যুবদল কর্মী জামাল সিকদার (৪০)। তিনি ঢাকায় রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। তার বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। নিহতের এক বছর পার হলেও স্বামীর শোকে এখনো কাতর স্ত্রী।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহত জামালের স্ত্রী শিউলি আফরোজ বলেন, আমার স্বামী জামাল সিকদার যুবদলের রাজনীতি করত। সে দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। আমার স্বামীকে যেন শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয়। পাশাপাশি খুনির বিচার চাই আমরা। তিনি আরও বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর আমাদের জীবন থমকে গেছে। স্বামীর আশা ছিল একমাত্র মেয়েকে ঢাকায় ভর্তি করিয়ে লেখা পড়া করাবে। স্বামীর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে মেয়েকে ঢাকার একটি কলেজে ভর্তি করিয়েছি। এখন মেয়েকে নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। এ ছাড়া আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা চাই।
হত্যার বিচার দাবি : ভাইয়ের কথা স্মরণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শহীদ ইলিয়াস খানের ভাই যুবদল নেতা মহসিন খান বলেন, ৪ আগস্ট আন্দোলনে গিয়ে চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন আমার ভাই ইলিয়াস। আমার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। আমরা শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি চাই। পাশাপাশি ইলিয়াসকে যারা হত্যা করেছে আমরা তাদের বিচার চাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি কালবেলাকে বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গৌরনদীর তিনজন যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আমরা এরই মধ্যে নিহতদের পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। এ ছাড়াও তাদের পরিবারকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তাদের যে কোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন পাশে রয়েছে।
মন্তব্য করুন