সার্ভেয়ার ফল্টের মুখে পড়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে, পার্বতীপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলা বিদ্যুৎহীন কিংবা লো-ভোল্টেজের কবলে পড়েছে।
সোমবার (২১ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টা থেকে গোটা উত্তরাঞ্চল বিদ্যুৎহীন ছিল ভোর ৫টা পর্যন্ত।
পুরোপুরি কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিট ও ১২৫ মেগাওয়াটের ১নং ইউনিটের উৎপাদন সোমবার সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের উৎপাদন কার্যক্রম।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, সার্ভেয়ার ফল্টের কারণে কেন্দ্রের ইউনিট দুটি বন্ধ হয়ে যায়। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে ফিরতে পারবে। সোমবার ভোর থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩নং ইউনিটটির উৎপাদন বন্ধ হয়। ২৭৫ মেগাওয়াট ৩য় ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১৫০-১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। ৩নং ইউনিটটি চালু রাখতে দৈনিক বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১ হাজার ৬০০ টন কয়লা লাগত।
তিনি বলেন, সোমবার দুপুর ১টার দিকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১নং ইউনিটটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ১২৫ মেগাওয়াট ইউনিট থেকে প্রতিদিন ৫০-৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। ১নং ইউনিটটি চালু রাখতে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টন কয়লা ব্যবহার হতো।
তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ৪ বছর ৮ মাস ধরে তাপবিদুৎ কেন্দ্রের ২নং ইউনিটটি সংস্কার করার জন্য ওভার হোলিংয়ের কাজ চলছে। ১২৫ মেগাওয়াট ২নং ইউনিট দিয়ে প্রতিদিন ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো।
জানা গেছে, পার্বতীপুর উপজেলায় বিদ্যুৎ-বিভ্রাট লোডশেডিংয়ে কবলে পড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার সাধারণ গ্রাহক। এ উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ থেকে ২০ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ পায় তারা ১০ থেকে ১১ মেগাওয়াট। দিনাজপুর পল্লীবিদ্যুৎ-২ পার্বতীপুর জোনাল অফিসের আওতাধীন প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১১ মেগাওয়াট।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) পার্বতীপুর কার্যালয় জানিয়েছে, পার্বতীপুর শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ মিলছে ৩ থেকে ৪ মেগাওয়াট। শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। নেসকোর পার্বতীপুর শহরে বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে ৭ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৩ মেগাওয়াট। কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ বিদ্যুৎহীন কিংবা লো-ভোল্টেজের কবলে পড়েছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট চালু রেখে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন কয়লার প্রয়োজন পড়ে।
তবে, আজ পর্যন্ত তিনটি ইউনিট একই সঙ্গে কখনোই চালানো সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কোল ইয়ার্ডে কয়লা মজুত রয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার টন। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সরবরাহকৃত কয়লার ওপর নির্ভর করে ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। অপরদিকে, গত ২৩ জুন থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ১৩০৫ ফেইজের কয়লা মজুত শেষ হলে বর্তমানে কয়লা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। আসা করা হচ্ছে, আগামী আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে কয়লা উত্তোলন শুরু হবে।
এ ব্যাপারে কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট ও ১নং ইউনিটটি মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। সার্ভেয়ার ফল্টের কারণে দুটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে কেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রের দুটি ইউনিট চালু হলে এ অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেকটা কমবে আসবে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রের দুটি ইউনিটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরবে।
মন্তব্য করুন