ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায়। পানির অভাবে আমনের জমি তৈরি, চারা রোপণ ও পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষক। যেসব জমিতে আমনের চারা লাগানো হয়েছে, সে সব জমিতে পানির অভাবে ফেটে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে বাড়তি খরচে অনেকে অগভীর নলকূপের পানি দিয়ে জমি রক্ষার চেষ্টা করছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন চাষ মৌসুমে উপজেলা পৌরসভা এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নে ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য তৈরি করা হয়েছে ৯০৭ হেক্টর জমিতে বীজতলা। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ধান। জুলাই মাসে সামান্য বৃষ্টিপাত হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের কিছু কম জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। এরপর আর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা বাকি জমিতে চারা রোপণ করতে পারছেন না।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমন ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা আমন চাষের জন্য কষ্ট করে জমি তৈরি করলেও চারা রোপণের পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় জমিতে চারা রোপণ করতে পারছেন না। কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়াসহ প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে জমি ফেটে যাচ্ছে। অনেক কৃষক বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় রয়েছেন আমন চারা রোপণের জন্য। কেউ কেউ জমির আশপাশের ডোবা-নালায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এর পরও তাপপ্রবাহের কারণে প্রস্তুতকৃত জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে সেচ দিয়ে আমন চাষ করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের বারাইপাড়া গ্রামের কৃষক মোকছেদ আলী বলেন, আমন আবাদ বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। বৃষ্টি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে অগভীর নলকূপ থেকে সেচ দিয়ে এক একর ২৫ শতাংশ জমিতে আমন চাষ করতে হচ্ছে। এতে এক একর ২৫ শতাংশ জমিতে সেচ দিয়ে চারা রোপণ করতে বাড়তি উৎপাদন খরচ পড়ছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা।
উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে তার সাড়ে তিন একর জমিতে আমন চাষ করবেন। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, তবে শেষতক ফসলের দাম পাবেন কি না, তা নিয়ে এখনই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এ কৃষক।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, দিনাজপুর জেলায় চলতি বছরের মে মাসে ৩৬৩ মিলিমিটার, জুন মাসে ৩৭৮ মিলিমিটার, জুলাই মাসের ১৬ তারিখ দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রতি বছর এ সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় থাকায় কিছু সময় আংশিক মেঘলা আকাশ, কিছু সময় রোদের দেখা আবার মাঝে মধ্যে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ অবস্থা আগামী ২৪ জুলাই পর্যন্ত কমবেশি থাকতে পারে। এরপর ২৫ জুলাই থেকে উল্লেখযোগ্য হারে বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ মো. শাহানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, চলতি আমন চাষ মৌসুমে বৃষ্টিপাতের অভাবে কৃষকরা চারা রোপণ করতে পারছেন না এটা সত্য। তবে আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত আমন চারা রোপণ করা যাবে। এ ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে কৃষককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন