কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে আসছিল সৈকত এক্সপ্রেস। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাত ১০টা ২৫ মিনিট। পথে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকায় দেখা মিলে হাতির পাল। হাতি দেখে ট্রেন থামান চালক। হুইসেল দেওয়ার পর রেললাইন থেকে সরে পড়ে হাতির পাল। কিন্তু এরপরই একটি হাতি ট্রেনের বগিতে আক্রমণ করে।
এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মধ্যে। যদিও ট্রেনচালকের দক্ষতায় রক্ষা পায় হাতির পাল ও যাত্রীরা।
জানা গেছে, আন্তঃনগর সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে ১৭টি বগিতে যাত্রী ছিল প্রায় ৫০০। লোকোমাস্টার (ট্রেনচালক) ছিলেন আবদুল আউয়াল এবং গার্ড (পরিচালক) সাখাওয়াত হোসেন। শেষ বগিটি ছিল গার্ডের।
বুধবার (২৩ জুলাই) এ বিষয়ে কথা হয় ট্রেনচালক আবদুল আউয়ালের সঙ্গে। তিনি কালবেলাকে বলেন, রাত ৮টায় কক্সবাজার থেকে ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল সৈকত এক্সপ্রেসের। কিন্তু ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে প্রায় ৫০ মিনিট দেরি হয়ে যায়। ট্রেন নিয়ে আসার পথে হারবাং-লোহাগাড়া সেকশনের চুনতি অভয়ারণ্যে রেললাইনের ওপর একটি হাতি চোখে পড়ে। ওই এলাকায় চার কিলোমিটার পথে ট্রেনের গতি থাকে ২০ কিলোমিটার।
তিনি আরও বলেন, ধীরগতিতে চালানোর কারণে এবং ট্রেনের হেডলাইটের আলোতে রেলপথের ওপর হাতি দেখতে পান আবদুল আউয়াল। কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। তবে দেখার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক চাপতে থাকেন। একপর্যায়ে জরুরি ব্রেকে চাপ দেন। এতে কাজ হয়। হাতি যেখানে অবস্থান করছিল, তার ঠিক আগে গিয়ে ট্রেন থামে। হাতির কোনো বিপদ না হওয়ায় স্বস্তি পান। এরপর হাতি যাতে সরে যায় এ জন্য ঘনঘন হুইসেল দিতে থাকেন। এতে হাতি নিচে নেমে যায়।
ট্রেনচালক বলেন, হাতি নেমে যাওয়ার পর ১-২ মিনিট পর ট্রেনের গার্ড সাখাওয়াত হোসেন ফোন করে জানান, হাতি ট্রেনের বগিতে ধাক্কা দিচ্ছে। এতে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। এর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। দ্রুত ট্রেন চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করি।
ট্রেনের গার্ড সাখাওয়াত হোসেন বলেন, হঠাৎ ট্রেন থেমে গিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনচালক ফোন করে জানান, রেললাইনের ওপর হাতি আছে। তাই সতর্কতা হিসেবে বগির ডান পাশের দরজা বন্ধ করে দেই। এরপর বাম পাশের দরজায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলাম। হাতি ক্রমাগত দরজা ও বগিতে আঘাত করতে থাকে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। চালককে ফোন দিয়ে দ্রুত ট্রেন ছাড়তে বলি। অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। হাতিও রক্ষা পেয়েছে, মানুষেরও কিছু হয়নি।
এ সময় দৃশ্যটি যাত্রীদের কেউ কেউ নিজেদের মোবাইল ফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ঈদ স্পেশাল-১০ ট্রেনের ধাক্কায় একটি বন্যহাতি আহত হয়। দুর্ঘটনার দুই দিন পর ১৫ অক্টোবর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতিটি মারা যায়।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী বাহার উদ্দিন বুধবার জানান, অভয়ারণ্য রেঞ্জ কার্যালয়ের উত্তর পাশে রেললাইনের উভয়পাশে থাকা ব্যারিয়ারের ভেতর হাতির পায়ের ছাপ দেখা গেছে। রেঞ্জ কার্যালয়ের ৫০০ মিটার উত্তরে রেললাইনে ব্যারিয়ার নেই। সম্ভবত হাতিটি ওই এলাকা দিয়ে ঢুকে কিছুটা দক্ষিণে চলে আসে। অভয়ারণ্য এলাকায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে।
তিনি বলেন, চালক দূর থেকে হাতি দেখতে পেয়ে গতি আরও কমিয়ে দেন। হাতির কাছাকাছি এসে ট্রেন থেমে যায়। পরে হাতিটি ট্রেনে ধাক্কা দেয়। ট্রেন ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর হাতিটি রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সঙ্গে লাগোয়া আন্ডারপাসের লোহার বেষ্টনী ভেঙে পূর্ব দিকে চলে যায়।
মন্তব্য করুন