বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:০২ এএম
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:০৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

সাত মাসে ১৯ খুন, বগুড়ায় হত্যা যেন নিত্যদিনের ঘটনা

ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স
ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

বগুড়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। পুলিশের তথ্য অনুসারে, গত সাত মাসে জেলার বিভিন্ন থানায় ১৯টি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ধরনও উদ্বেগজনক। অহরহ খুনের ঘটনায় জেলার বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ বিরাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জমিসংক্রান্ত বিরোধ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও পরকীয়ার জেরে বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে পুলিশের দাবি, এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন ও বেশিরভাগ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।

বগুড়া জেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল ওহাব বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বহু সন্ত্রাসী বগুড়া ছাড়লেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় তারা আবার ফিরে এসেছে। এখন খুনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে তারা। এদের দমনে পুলিশকে কঠোর হতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মাত্র সাত মাসে বগুড়ায় ১৯ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছুরিকাঘাত, রামদা ও দা দিয়ে কুপিয়ে অথবা গলা কেটে। এর আগে গত বছর বগুড়ায় ৯৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। জেলা পুলিশের তথ্যে জানা গেছে, এই সাত মাসে মোট ১৬টি ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত আটজন। এসব ঘটনার অন্তত ১৩টিতেই প্রত্যক্ষভাবে ছুরি, রামদা বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। এর বাইরে কয়েকটি ঘটনায় শ্বাসরোধে ও ভারী ধাতব বস্তু ব্যবহার করে হত্যার তথ্য রয়েছে। বেশিরভাগ খুনের ঘটনা ঘটে জোড়ায় জোড়ায়।

মার্চ থেকে বাড়তে শুরু করে নৃশংসতা ও সহিংসতা। ওই মাসেই চারটি ঘটনায় পাঁচজন খুন হন, যার মধ্যে কিশোর গ্যাং দ্বন্দ্বে এবং পারিবারিক সহিংসতায় একাধিক ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। সাবগ্রামে দ্বিতীয় স্বামীর রামদার কোপে মারা যান দুই নারী ছকিনা বেগম ও আনোয়ারা বেগম। একই মাসে গাবতলীতে ১৩ বছরের এক শিশুকে গলা টিপে হত্যা করা হয়, এবং শেরপুরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে আকবর আলীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

জুনে ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান তিনজন, আহত হন পাঁচজন। ১৩ জুন শহরের কাটনারপাড়ায় মাদকের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বন্ধুর ছুরিতে খুন হন বিদ্যুৎ শেখ। একই দিনে সারিয়াকান্দিতে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে গার্মেন্টসকর্মীসহ আহত হন তিনজন। ২৬ জুন শাজাহানপুরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ছুরিকাঘাতে খুন হন আনোয়ার হোসাইন।

সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে জুলাইয়ে। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বগুড়া শহরের ইসলামপুরে দাদি শাশুড়ি লাইলী বেওয়া ও নাতবউ হাবিবা ইয়াসমিনকে গলা কেটে হত্যা করে সৈকত হাসান নামের এক যুবক। বাঁচতে গিয়ে সৈকতের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন বন্যা নামের এক কিশোরী। এ ঘটনায় গোটা শহর কেঁপে ওঠে। একই মাসে দুপচাঁচিয়ার লক্ষ্মীমণ্ডপ গ্রামে শ্বশুর আফতাব হোসেন ও পুত্রবধূ রিভা খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থল থেকে তছনছ ঘর ও হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারিতে দুজন, ফেব্রুয়ারিতে দুজন, মার্চে পাঁচজন, জুনে ছয়জন এবং জুলাইতে চারজন খুন হন। এপ্রিল ও মে মাসে বগুড়ায় উল্লেখযোগ্য কোনো হত্যাকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যায়নি।

পরিসংখ্যান বলছে, অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড রাতে সংঘটিত হয়েছে এবং অপরাধীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিকটিমের পূর্বপরিচিত। মাদক, কিশোর গ্যাং, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও প্রেম-সংক্রান্ত কারণে এসব হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে কিশোর গ্যাং নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা তীব্র আকার ধারণ করেছে।

নিহতদের স্বজনদের দাবি, অধিকাংশ ঘটনার পরপরই মূল আসামি গ্রেপ্তার হলেও বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণে অপরাধীরা বারবার সাহস পায়। পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, সামাজিক সচেতনতা, পারিবারিক শিক্ষা, কিশোর অপরাধ দমন এবং তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছেন তারা।

সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন, বগুড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ধারালো অস্ত্র বেচাকেনা রোধে প্রশাসনের তদারকি দরকার। পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের অভাবে অপরাধীরা বারবার সুযোগ পাচ্ছে। আর যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা যায়, অনেকাংশেই অপরাধ কমে যাবে। তিনি বলেন, একের পর এক খুনের ঘটনা আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। শহরের পাড়ামহল্লায় এখনো অপরাধীরা আগের মতোই বিচরণ করছে। এ বিষয়ে পুলিশ বিভাগকে আরও তৎপর হতে হবে।

বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, ‘ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার রোধে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজকে আগে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে লিফলেট বিতরণ শুরু করেছি। নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তবে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টাতেই সব ধরনের অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা বিশ্বাস করি, বগুড়াবাসী এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিশ্বজুড়ে স্টারলিংক সেবা বিপর্যস্ত, ক্ষমা চাইলেন ইলন মাস্ক

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার উত্তেজনার শুরু যেখান থেকে

দুপুরের মধ্যে ৭ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

পারিশ্রমিক বাড়ালেন জাহ্নবী

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সরকার স্ট্যাবল হবে না : মুশফিকুর রহমান

মিশরের কাছে আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র 

আ.লীগের ২ নেতা গ্রেপ্তার, বিএনপি অফিসে ককটেল বিস্ফোরণ

কেন ভেঙে যায় আহান-সুহানার প্রেম?

চাপাতির কোপে বড় ভাই নিহত, ছোট ভাই হাসপাতালে

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চাপে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

১০

থানায় ঢুকে এএসআইকে ছুরিকাঘাত, পুকুরে লাফিয়ে উধাও দুর্বৃত্ত

১১

আজ ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

১২

সমুদ্র উত্তাল, শূন্য হাতে ফিরেছে শত শত ট্রলার

১৩

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

১৪

শুক্রবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৫

২৫ জুলাই : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৬

জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনকে প্রথম স্বীকৃতি দিচ্ছে ফ্রান্স

১৭

২৫ জুলাই : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৮

সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ১১ জেলে অপহৃত

১৯

ভারতে পালানোর সময় সাবেক শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেপ্তার

২০
X