এবার নতুন করে যুদ্ধে জড়াচ্ছে এশিয়ার দুই দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। বিরোধপূর্ণ ‘এমেরাল্ড ট্রায়াঙ্গল’ থেকেই এই সংঘাত শুরু হতে যাচ্ছে। ‘এমেরাল্ড ট্রায়াঙ্গল’ হলো এমন একটি অঞ্চল, যেখানে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমান্ত মিলিত হয়েছে।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থলসীমান্ত রয়েছে। যেটি মূলত ফরাসিরা চিহ্নিত করেছিল যখন কম্বোডিয়া ছিল তাদের উপনিবেশ। এই সীমানা ঘিরেই বারবার সংঘর্ষ ও রাজনৈতিক টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। এশিয়ার এই দুই দেশের সম্পর্ক গেল কয়েক দশক জুড়ে সহযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দোদুল্যমান ছিল।
এর মধ্যে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত নিয়ে কম্বোডিয়া জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা আইসিজেতে আবেদন করেছিল। তবে থাইল্যান্ড ওই আদালতের এখতিয়ার মানেনি। তাদের দাবি, সীমান্তের বেশ কিছু অঞ্চল পুরোপুরি চিহ্নিত হয়নি—বিশেষ করে যেসব এলাকায় প্রাচীন মন্দির রয়েছে। এই অবস্থায় ২০১১ সালে এই সীমান্তে অবস্থিত ১১শ শতাব্দীর ‘প্রি ভিহেয়ার মন্দির’ ঘিরে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছিল। এতে অন্তত ২০ জন নিহত হন এবং উভয় দেশের হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।
গেল মে মাসে বিরোধপূর্ণ এই এলাকায় হঠাৎ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হন। এ সংঘর্ষের জন্য উভয় দেশ একে অপরকে দোষারোপ করে এবং নিজেদের পদক্ষেপকে আত্মরক্ষামূলক বলে দাবি করে। পরে উভয় দেশই সীমান্তে সেনা সংখ্যা বাড়ায় ও শক্ত অবস্থান নেয়।
থাইল্যান্ড সীমান্ত পয়েন্টগুলোর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করে, পারাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেয়। জবাবে কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে ফল-সবজি আমদানি এবং থাই সিনেমা ও টিভি নাটক নিষিদ্ধ করে।
এরপর ১৮ জুন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতোংতার্ন শিনাওয়াত্রার সঙ্গে ফনোলাপ করেন কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হুন সেন। ওই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর থাই প্রধানমন্ত্রী পেতোংতার্ন শিনাওয়াত্রাকে জুলাই মাসে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। কারণ সেই ফোনালাপে তিনি নিজ দেশের সেনাবাহিনীর সমালোচনা করেন।
এই অবস্থায় গেল ১৬ জুলাই ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের থাইল্যান্ডের এক সেনা পা হারান এবং ২৪ জুলাই আরও পাঁচ সেনা আহত হন। এই ঘটনার পর দুই দেশ তাদের কূটনৈতিক স্টাফ প্রত্যাহার করে নেয়।
ধারাবাহিক এই উত্তেজনায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি থাইল্যান্ডের সীমান্ত প্রদেশ সুরিনের ফানম ডঙ রাক বিভাগের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এরপর কম্বোডিয়ার প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হুন সেন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন- থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুদ্ধ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। ভয়াবহ এই অবস্থায় এশিয়ার এই দুই দেশ যে কোন সময় সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
মন্তব্য করুন