বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ১২:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাঙালি নদীর ভাঙনে শতাধিক বিঘা জমি নদীতে বিলীন, হুমকির মুখে ৫ গ্রাম

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বাঙালি নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে পাঁচ গ্রাম। ছবি : কালবেলা
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বাঙালি নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে পাঁচ গ্রাম। ছবি : কালবেলা

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বাঙালি নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে পাঁচটি গ্রামসহ প্রায় ৩০০ বিঘা ফসলি জমি ও বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে রয়েছে বরিতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নোয়াবাড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরিতলী জামে মসজিদ, নুরানি মাদ্রাসা, কবরস্থান ও মক্তব।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের বরিতলী গ্রামের প্রায় ৩০০ মিটার ও বিলনোথার গ্রামের প্রায় ৪০০ মিটার এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। গত ১৫ জুলাই থেকে নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে ওই এলাকার অন্তত ১২০ বিঘা ফসলি জমি। হুমকির মুখে আছে বরিতলী, বিলনোথার, নবীনগর, শইলমারি ও শান্তিনগর গ্রাম। এই এলাকাজুড়ে বাঙালি নদীর ভাঙন আতঙ্কে অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিবছর নদীভাঙন রোধে নেওয়া কোনো ব্যবস্থাই কাজে আসছে না।

স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, ভাঙন অব্যাহত থাকলে আরও অনেক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বরিতলী গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমার বাবাসহ আমি ৭ বার এই বাঙালি নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছি। একটা পরিবার ৭ বার যদি ভাঙনের শিকার হয়, তাহলে তার আর কী থাকে?’

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘গত বছরও বাড়ির পাশের ৫ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। এখন দেখছি, আমার মাথাগোঁজার ঠাঁই বাড়িটিও চলে যাবে।’

বিলনোথার গ্রামের বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, ‘একসময়ে আমার বাপ-দাদার অনেক জমি ছিল। আজ আমরা জমিহারা। এই বাঙালি নদী আমাদের সেই রাজত্ব ধ্বংস করে ফকির বানিয়ে দিয়েছে। বাঙালি নদীর উপর্যুপরি ভাঙনের পর ভিটেমাটি হারিয়ে আমার আপন ভাই এখন ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করেন। ভিটেমাটি হারানোর দুঃখে তিনি আর এলাকায় বেড়াতেও আসেন না।’

শইলমারি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আবুল ফজল বলেন, ‘১৯৮৮ সালের পর থেকে আমি দেখেছি, এই বাঙালির ভয়াবহতা। আমার নানার অনেক জমি ছিল। সব জমি ভেঙে গেছে। মায়ের কাছে শোনা, নানার বাড়ি ১২ বার ভেঙেছে। আমার ভিটেবাড়ি সরিয়েছি সাতবার। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, এ এলাকার বাঙালি নদীর ভাঙন প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক।’

বিগত বছর বাঙালি নদীর বরিতলী পয়েন্টে নদীভাঙন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ হাজার জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে দেয়। তবে প্রতিনিয়ত নদীভাঙনের মুখে কাজে আসছে না সেই বাঁধও। স্থানীয়দের দাবি, ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এ বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, শেরপুর উপজেলাধীন বরিতলী গ্রামে বাঙালি নদীর ডান তীরের বেশ কিছু এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে ভাঙনস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।

পরিদর্শনে দেখা গেছে, এই দেড়শ মিটার কাজ বাস্তবায়ন করতে ৫০ লাখ টাকার মতো ব্যয় হবে। এর প্রতিবেদন আমরা প্রস্তুত করেছি। শিগগির কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠাব। বরাদ্দ পেলে দ্রুতই কাজ শুরু করব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া যুবকের মৃত্যু

সকাল থেকে মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক

প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর / বিদেশে সরাসরি মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারছেন না কুবি শিক্ষার্থীরা

সুপারসনিক বিমানের সফল পরীক্ষা, কী আছে এতে

ঘরে মুরগির মাংস দেখে সেজদায় লুটিয়ে পড়ল শিশু

ব্রাজিলে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, কী হচ্ছে সেখানে

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

আজ ৩৬ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

তিস্তা নদী রক্ষার দাবিতে শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী ফ্ল্যাশ মব

পুলিশকে মারধর করে হাতকড়াসহ পালানো সেই আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

১০

গাজায় হামলা থামেনি, শতাধিক নিহত

১১

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

১২

মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বাড়ি যাওয়ায় পায়ে শিকল বেঁধে শিশুর পাঠদান

১৩

মধুপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবলু আটক

১৪

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৫

৩০ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

চট্টগ্রামে বর্জ্য থেকেই তৈরি হবে গ্রিন ডিজেল ও অ্যাভিয়েশন ফুয়েল

১৭

রাজধানীতে আ.লীগ নেতা মানিক দর্জি গ্রেপ্তার

১৮

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজি-দুঃশাসনমুক্ত দেশ গড়বে : কফিল উদ্দিন

১৯

আফগানিস্তান নয়, বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল

২০
X