ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দৃশ্যমান উন্নয়ন হলেও থামছে না যানজট আর জনদুর্ভোগ। সম্প্রসারিত মহাসড়কে পৃথক সার্ভিস লেন, ফুটওভার ব্রিজ, সড়ক বিভাজক- সবই হয়েছে, কিন্তু এসব উন্নয়ন কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে কিছু বিক্ষিপ্ত অনিয়মের কারণে। এ যেন ‘এতিম’ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, অনিয়ম দেখার কেউ নেই।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সার্ভিস লেন দখল করে বসানো হয়েছে ট্রাক ও প্রাইভেটকার স্ট্যান্ড। সড়ক ঘেঁষে বসেছে বাজার ও ভাসমান দোকান। স্থানীয় গণপরিবহনগুলো নিয়ম না মেনে মূল লেনে যাত্রী ওঠানামা করছে। এ বিশৃঙ্খলার পেছনে রয়েছে নজরদারির অভাব ও অসচেতন চালকদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।
রোববার (২৭ জুলাই) হেমায়েতপুর-সাভার-নবীনগর সড়কে ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে সার্ভিস লেন দখল করে রাখা হয়েছে ২০-২৫টি প্রাইভেটকার। পাশাপাশি মূল লেনে থেমে যাত্রী তুলছে বাস। অন্যদিকে আরিচাগামী লেনে ১০-১৫টি লেগুনা ও অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থেকে সার্ভিস লেনের চলাচল ব্যাহত করছে।
একই চিত্র দেখা গেছে সাভার বাসস্ট্যান্ড ও নবীনগর পর্যন্ত অধিকাংশ স্ট্যান্ডে। এ অবস্থায় যাত্রীরা পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।
এ ছাড়া দোকানে দোকানে ভরেছে সার্ভিস লেন। সাভার ও নবীনগর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকার সার্ভিস লেনের বড় অংশজুড়ে এখন খাবার, পোশাক ও সবজির ভাসমান দোকান। বিকেলের পর তো পুরো লেনটাই চলে যায় হকারদের দখলে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে বাজার, আড়ত ও পণ্যবাহী ভ্যান–পিকআপের অবাধ উঠানামার কেন্দ্র। ফলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে নিয়মিত।
সাভার থেকে ঢাকাগামী যাত্রী খাইরুজ্জামান বলেন, ‘হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ডগুলো পার হতে ঘণ্টা লেগে যায়। একবার সার্ভিস লেনে ঢুকলেই বিপদ, এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় অতিরিক্ত ব্যয় হয়।’
মূলত চালকদের অনীহাই যাত্রীদের দুর্ভোগের অন্যতম কারণ। জানা যায়, বাসচালকরা নিয়ম না মেনে মূল লেনেই যাত্রী তুলছেন ও নামাচ্ছেন। এতে যাত্রীদের পার হতে হচ্ছে সড়ক বিভাজক টপকে, যা বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসচালক বলেন, ‘সার্ভিস লেনে গেলে অনেক সময় লাগে। যাত্রীরাও চায় না দেরি করতে, তাই আমরা মেইন রোডেই যাত্রী তুলি।’
সড়কটি ব্যবহারকারীরা বলছেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে উন্নয়নমূলক কাজ চললেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সামাজিক সচেতনতা ছাড়া নাগরিক দুর্ভোগ কমানো সম্ভব নয়। মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চালক, যাত্রী, ব্যবসায়ী এবং প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।
এদিকে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ধামরাই শাখার সভাপতি নাহিদ মিয়া সড়কের এ দুর্ভোগের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির অভাবকে দায়ী করে বলেন, ‘বহুবার মৌখিকভাবে বলেছি, লিখিত চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু দায়সারা অভিযান ছাড়া প্রশাসনের তেমন আন্তরিকতা দেখা যায় না। যানজটমুক্ত পরিবেশের জন্য নিয়মিত নজরদারি জরুরি।’
তবে পুলিশের দাবি, তারা সজাগ। ঢাকা জেলা উত্তর ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস্ ও ট্রাফিক) আরাফাতুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। সড়কে অনিয়ম হলে জরিমানা ও ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আবারও আমরা কঠোর অভিযানে নামব।’
সড়কটি ব্যবহারে সাধারণ মানুষের কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে সেটা আমরা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যার সমাধানে আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যানজট নিরসন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। মূল লেন গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এটি বন্ধ করতে হলে সাধারণ নাগরিক এবং গাড়ি চালক উভয়কেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।’
এদিকে রাস্তার দুই ধারে দোকান বসিয়ে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করছে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আরাফাতুল ইসলাম আরও বলেন, চাঁদাবাজ এবং অবৈধ দখলদার ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ কাজ করছে। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ফুটপাতে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি করছে এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। চাঁদাবাজ কিংবা সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। সুতরাং যে অপরাধ করবে তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
এসব বিষয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক আবুবকর সরকার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে কালবেলাকে বলেন, অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করে সাধারণ মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। এখনো আমরা সাধারণ মানুষের চলাচল নিরাপদ করতে কাজ করছি। তবে একটি গোষ্ঠী, অভিযান পরিচালনার কয়েকদিনের মধ্যেই সড়ক আবার নিজেদের দখলে নেয়,ফলে তৈরি হচ্ছে যানজট এবং জনভোগান্তি। এ ধরনের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে সড়কটি ব্যবহারকারী এবং গাড়িচালকসহ সবার আন্তরিকতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদসহ সর্বস্তরের মানুষের আন্তরিকতা ও সহযোগিতা না থাকলে শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এ ধরনের সমস্যা নির্মূল করা কঠিন। তবে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি এবং চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থার পরিকল্পনা করছি। যে কোনো মূল্যে মহাসড়ক এবং এ সাভারবাসীকে সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা দিতে সাভার উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
মন্তব্য করুন