গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অবশেষে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিল ইসরায়েল। রোববার থেকে কার্যকর হওয়া এই ঘোষণায় বলা হয়েছে, তারা প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ১০ ঘণ্টার জন্য সামরিক অভিযান স্থগিত রাখবে এবং নতুন ত্রাণ করিডর চালু করবে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত (স্থানীয় সময়) আল-মাওয়াসি, মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহ এবং উত্তরের গাজা শহরে সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখা হবে। এই অঞ্চলগুলোকে ‘মানবিক এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ইসরায়েলের এই ঘোষণার মধ্যেই জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজায় বহুদিন পর আবারও আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে। জর্ডান সরকার জানিয়েছে, তারা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত যৌথভাবে প্রথম দফায় গাজায় ২৫ টন খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্যারাশুটের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। তবে জর্ডান স্পষ্ট করে দিয়েছে, এই এয়ারড্রপ কোনোভাবেই সড়কপথে ত্রাণ পৌঁছানোর বিকল্প নয়।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, গাজা শহরে আকাশ থেকে পড়া ত্রাণের কিছু প্যাকেট মানুষের ওপর পড়ায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, খাবার ও ওষুধবাহী ত্রাণ বহনকারী ট্রাকের জন্য সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট ‘নিরাপদ করিডোর’ চালু থাকবে। তবে, বাস্তবে এসব ত্রাণ যথাসময়ে পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন গাজার কর্মকর্তারা।
ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিসরের রেড ক্রিসেন্ট যেসব ত্রাণ ট্রাক পাঠিয়েছে, সেগুলো রোববার বিকেল পর্যন্ত ইসরায়েলের কেরেম শালোম সীমান্তে আটকে ছিল।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, এই সাময়িক যুদ্ধবিরতির সময়ের মধ্যেই তাদের কর্মীরা ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে যত বেশি সম্ভব ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমাদের টিম মাঠে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে যাতে যত বেশি ক্ষুধার্ত মানুষকে সাহায্য করা যায়।’
তবে, এসব মানবিক প্রচেষ্টার মাঝেও রোববার গাজার কেন্দ্রে আল-আকসা ও আল-আওয়দা হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েলি গুলিতে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা অন্তত ১৭ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। এখন পর্যন্ত অপুষ্টি ও ক্ষুধায় মৃত্যু হয়েছে ১৩৩ জনের, যার মধ্যে ৮৭ জন শিশু।
মন্তব্য করুন