সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের কারাগারে আটক রাখার শুনানিতে বিচারিক কাজে অসহযোগিতা ও আদালত অবমাননার অভিযোগে ডিএমপির অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি তারেক জুবায়েরকে শোকজ করা হয়েছে।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহ এ আদেশ দেন। আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। রোববার (২৭ জুলাই) আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, গত ২৪ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় এ বি এম খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। শুনানির জন্য ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ডিএমপির অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি তারেক জুবায়ের তার মোবাইল থেকে বিচারককে কল দেন। তখন তিনি আসামিকে আদালতের ভবনের নিচে প্রিজনভ্যানে রেখে শুনানি করার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। তবে আদালতের ভাবমূর্তি রক্ষায় এবং বিচারিক কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হতে বিরত রাখার জন্য বিচারক ওই প্রস্তাব নাকচ করেন।
আরও বলা হয়, পরে ৭টা ১৪ মিনিটে আসামিকে আদালতে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ায় বিচারক ডিসিকে ফোন কলে জানতে চান, আসামিকে হাজির করতে কেমন সময় লাগতে পারে। জবাবে ডিসি তারেক জোবায়ের বিচারককে বলেন, তিনি জানাতে পারবেন না। এসময় বিচারক আনুমানিক সময় জানানোর অনুরোধ করলে তিনি তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে কথা বলতে বা কোন তথ্য দিতে ইচ্ছুক নন বলেও জানান ডিসি। এছাড়া ডিসি এ বিষয়ে বিচারককে আইন উপদেষ্টা ও ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
আদালত বলেন, ডিএমপির অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি, বিচারিক কার্যক্রম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে মামলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান, যা ধৃষ্টতা ও ঔদ্ধত্যের পরিচয়।
আদালত আরও বলেন, ডিসি প্রসিকিউশনের এমন আচরণ পুলিশ প্রবিধান ও প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে এবং তার এই অসহযোগিতা দণ্ডবিধির ১৭৬, ১৭৯ ও ২২৮ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় পড়ে। এছাড়া, বিচারক যেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারার আওতায় ‘এক্স-অফিসিও জাস্টিস অব পিস’ এবং বিচারিক দায়িত্বে ছিলেন। তাই তার জিজ্ঞাসিত বিষয়ে তথ্য না দিয়ে সহযোগিতা না করাটা আদালত অবমাননার শামিল।
এজন্য আদালত আদেশ দিয়েছেন, ডিসি তারেক জোবায়ের কেন আদালত অবমাননার অভিযোগে বিচারিক কার্যধারার মুখোমুখি হবেন না, তা জানিয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। আগামী ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে তার আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক ব্যাখ্যা জমা দিতে বলা হয়েছে, যা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে।
এবিষয়ে ডিসি (প্রসিকিউশন) তারেক জুবায়েরকে কালবেলা থেকে একাধিকবার ফোন করা হলেও পাওয়া যায় নি। তবে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, এবিষয়ে আমি কিছু জানি না। গত শনিবার থেকে আমি ছুটিতে আছি।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুলাই সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন