খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার ধলিয়া খালের ওপারেই পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাঠের সাঁকো পারাপারে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ শত শত পরিবার।
এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে ওই খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও তা আমলে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এতে ওই ওয়ার্ডের ৬ গ্রামের মানুষ এখন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
জানা গেছে, ধলিয়া খালের ওপারেই মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর ও বড়ঝালাসহ ছয় গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। ওই এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪টি মসজিদ একটি বৌদ্ধ মন্দিরসহ বহু কৃষিজমি ও বিভিন্ন ফলদ, বনদ গাছ সমৃদ্ধ সম্ভাবনাময় অনেক ফসল ফলে। একটি সেতু না থাকায় এবং কাঠোর সাঁকোটি নড়বড়ে থাকায় উৎপাদিত কৃষি পণ্য সাপ্তাহিক মাটিরাঙ্গা বাজারে বিক্রির জন্য যথাসময়ে আনতে না পারার কারণে নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া অসুস্থ ও অন্তঃসত্ত্বাদের চিকিৎসাসেবা এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ইতোপূর্বে ঝুঁকি নিয়ে ঝুলন্ত কাঠের সাঁকো পার হওয়ার সময় ঘটেছে অসংখ্য দুর্ঘটনা। তাছাড়া সময়মতো রোগীকে হাসপাতালে নিতে না পারায় মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটছে।
স্থানীয়রা জানায়, এসব গ্রামে চলাচলের একমাত্র কাঠের তৈরি পাটাতন দিয়ে নির্মিত একটি নড়েবড়ে ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। এ সেতুটিই ছিল গত দুই দশকের অধিক সময় ধরে এপারের সঙ্গে ওপারের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। বর্ষা এলেই খালের ওপারের বাসিন্দারা মাটিরাঙ্গার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এই খালের ওপরে সেতু নির্মাণ প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে দুই যুগের বেশি। ফলে দুর্ভোগ কমেনি এই এলাকার মানুষের। বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্নজনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েক বছর আগে নিজেদের প্রচেষ্টায় নিজেরাই কাঠের ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামের মানুষ। তবে প্রবল বর্ষণে সেই কাঠের সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় ফের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের।
পরে ২০২১ সালে তৎকালীন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অ.দা) মো. হেদায়েত উল্যাহকে দ্রুত সাঁকোটি ঠিক করতে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিলে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার যৌথ অর্থায়নে জনদুর্ভোগ লাঘবে কাঠের ঝুলন্ত সাঁকোটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে সেতুটি নির্মাণ শেষে ফের জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে দীর্ঘ ভোগান্তির অল্প সময়ের জন্য লাঘব হয়েছিল এসব গ্রামের মানুষের।
এদিকে সম্প্রতি কাঠের সাঁকোটি নড়বড়ে হওয়া ও নিম্নআয়ের মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে জনস্বার্থে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান এলাকাবাসী।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মিজানুর রহমান খোকন বলেন, বছরজুড়ে ধলিয়া খালে পানি থাকে। ফলে ভোগান্তি মানুষের পিছু ছাড়ে না। জনদুর্ভোগ লাঘবে ধলিয়া খালের ওপর পাকা সেতু নির্মাণের দাবি আমারও।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. সামছুল হক বলেন, সেতুটি নির্মাণের বিষয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এমপির ডিউ লেটারসহ চিফ ইঞ্জিনিয়ার বরাবর একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে। পৌরসভার এমন অর্থ নেই ধলিয়া খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করার।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ধলিয়া খালের ওপারে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। তাদের নিজেদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যবস্থার সুবাদে এবং এটি একটি অতি জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করে ব্রিজটি নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়ছে।
মন্তব্য করুন