সাতক্ষীরার আশাশুনির বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে মরিচ্চাপ নদী। এর ওপরের সেতুটি নির্মাণের পাঁচ বছর না যেতেই ধসে পড়েছে। এভাবে রয়েছে দেড় বছর। করা হয়নি সংস্কার। ধসে পড়া সেতু দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে মোটরসাইকেলের মতো ছোট যান। ভারী যান না চলায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এ পথে যাতায়াতকারীরা।
জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয় ওই কুন্দুড়িয়া-বাঁকড়া সেতু। প্রায় দেড় বছর আগে ধসে পড়ার পর এর সংস্কার নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, উপজেলা প্রকল্প উন্নয়ন অফিস একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।
শোভনালী ইউনিয়নের বাসিন্দারা উপজেলা শহরে যেতে এবং নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে এ সেতুর সড়কটি ব্যবহার করেন। এমনকি বাকড়া, সরাফপুর, কামালকাটি গ্রাম থেকে প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী এ সেতু পেরিয়ে কুন্দুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যায়।
অপরদিকে সেতুর পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বুধহাটা ইউনিয়নের কুন্দুড়িয়া, হাজিডাঙ্গা, শ্বেতপুর, বেউলা, পদ্ম বেউলা, নৈকাটি, পাইথালী ও চিলেডাংগা গ্রামের বাসিন্দাদের পাশের উপজেলা দেবহাটায় যাওয়ার ক্ষেত্রেও অন্যতম সেতু এটি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রতিদিনই কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এতে তাদের সেতুটির ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু সেতুটি মেরামত না করায় ভারী যান চলতে পারছে না। বাসিন্দাদের হেঁটে সেতু পার হতে হচ্ছে।
সেতুর নামফলক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মরিচ্চাপ নদীর ওপর ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা ৭০ পয়সা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
বাসিন্দারা জানান, শোভনালী ইউনিয়ন অংশ থেকে অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ, যাত্রীবাহী ইজিবাইক, ইঞ্জিনভ্যানসহ পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করতে না পারায় এসবকে উপজেলা সদর হয়ে ঘুরে আসতে হয়। এতে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বাড়তি পথ অতিক্রম করতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে পরিবহন খরচ। হঠাৎ অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিতেও পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুই পাড়ের সংযোগ সড়কে লেগে থাকলেও মাঝের পিলার দুটি ভেঙে পড়ে সেতুটি ঝুলে আছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই ব্রিজের মাঝের অংশ তলিয়ে যায়। দুপাড়ের বাসিন্দরা স্বেচ্ছাশ্রমে বালি ও ইটের খোয়া দিয়ে মাঝের ভাঙা অংশ ভরাট করে চলাচল করছে।
এ বিষয়ে আশাশুনি উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সেতুটি আমাদের নয়, এটার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে আপনাদের উপজেলা প্রকল্প উন্নয়ন কর্মকর্তা সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভেঙে পড়া সেতুটি যদি তারা অপসারণ করে, তাহলে আমারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এখানে নতুন সেতু করার চাহিদাপত্র পাঠাতে পারব।’
অপরদিকে প্রকল্প উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সোহাগ খান বলেন, ‘সেতুটি আমাদের অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মাণ করা হলেও এখন সেতুর দুপাশে এলজিইডি রাস্তা হওয়ার কারণে এটার দায়-দায়িত্ব এলজিইডির। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী খনন করার কারণে সেতুটি ভেঙে গেছে।’
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রনি আলম নুর বলেন, ‘বিষয়টি আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে জানাননি। কোনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারও আমাকে বলেননি। এখন আমি জানতে পেরেছি। দ্রুত উভয় দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জনদুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করব।’
মন্তব্য করুন