পারিবারিক কলহের জেরে নিজের স্বামীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মামাতো ভাই ওবায়দুল্লাহকে নিজের বাড়িতে ডেকে নেন তিনি। পরে তার পরিকল্পনায় মামাতো ভাই সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ৭ নম্বর ইসলামকাঠি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম শামীমকে হত্যা করে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) খুলনার পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালতে বৃষ্টির দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি নিয়ে টিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, বিয়ের পর থেকে বৃষ্টি স্বামীর সঙ্গে সুখী ছিল না। প্রায়ই তাকে মারধর করতেন শামীম। মারধরের ঘটনা থেকে তার মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ক্ষোভ মিটাতে গিয়ে শামীমকে হত্যার পরিকল্পনা করে বৃষ্টি। শামীমকে হত্যার তিন দিন আগে মামাতো ভাইকে বাড়িতে ডেকে নেয়। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন বৃষ্টি তার মামাতো ভাইকে শারীরিক নির্যাতনের কথা জানান। এ জন্য স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে বলে বৃষ্টি তার মামাতো ভাইকে জানান। শামীমকে হত্যা করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে তিনি সম্মতি জানান।
তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন রাতের খাবার খেয়ে শামীম ও তার স্ত্রী তৃতীয় তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটে আসে। এর কিছুক্ষণ পর বৃষ্টির মামাতো ভাইও ফ্ল্যাটে আসে। কীভাবে কোপ দিতে হবে তা বৃষ্টি ইশারায় দেখাতে থাকে। একপর্যায়ে ছুরি দিয়ে শামীমের ঘাড়ে কোপ দেয় ওবায়দুল্লাহ। এরপর সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের পর তারা দুজন আবারও ছাদে যায়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি পাশের জলাশয়ে ফেলে দেয় এবং তারা দুজনই পুনরায় দ্বিতীয়তলায় এসে শামীমের মায়ের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে থাকে।
পুলিশ সুপার বলেন, হত্যাকাণ্ডটি ক্লুলেস ছিল। তাছাড়া নিহত শামীমের মা রশিদা খাতুন এ ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডুমুরিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের একটি চৌকস দল কাজ করে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে শামীমের স্ত্রী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন। বৃষ্টির মামাতো ভাইয়ের বয়স কম হওয়ায় তাকে যশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ, শুক্রবার (২২ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে ডুমুরিয়ার আঠারোমাইল এলাকার তিনতলায় নিজ বাড়িতে খুন হন যুবদল নেতা শামীম হোসেন। তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত শামীম সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
রোববার (২৪ আগস্ট) বিকেলে নিহত যুবদল নেতার মা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রশিদা বেগম অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ডুমুরিয়া থানায় মামলা করেন। তদন্তে শামীমের মাদকসংশ্লিষ্টতা, পারিবারিক অশান্তি, আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মন্তব্য করুন