কয়েক দিনের বৃষ্টির পর প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়ছে ফেনী জেলা। তীব্র গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সূর্য যেন মধ্য গগণে জ্বলন্ত আগুন নিয়ে হাজির হচ্ছে। সকাল ৯টার পর থেকেই গরমের তীব্রতা বাড়তে থাকে, যা দুপুর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রীতিমতো অসহনীয় হয়ে ওঠে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ফেনী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পহেলা সেপ্টেম্বর জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে, যা উচ্চমাত্রার। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায় গরম আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শহরের ব্যস্ততম মহিপাল এলাকা, পাঁচগাছিয়া রোড, ট্রাংক রোড, পুলিশ লাইন, মিজান রোড, ফেনী কলেজ রোডে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। অন্যান্য সময় যেসব সড়কে মানুষের ভিড় লেগে থাকে, সেখানে এখন হাতেগোনা কয়েকজন পথচারী।
যারা বাইরে বের হচ্ছেন, তাদের অনেকেই মাথায় গামছা বা ছাতা নিয়ে রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না।
তীব্র এই তাপপ্রবাহ সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের। রিকশাচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক ও ফুটপাতে কাজ করা লোকজন গরমে অতিষ্ঠ।
মোস্তফা নামের একজন রিকশাচালক কালবেলাকে বলেন, সকাল থেকে রোদে অবস্থা খারাপ। রাস্তায় লোকজনই নেই, গরমে কেউ বের হয় না। ভাড়া পাই না, আবার রোদেও থাকতে হয়। মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
নুর করিম আজিম নামের নির্মাণ শ্রমিক কালবেলাকে বলেন, এই গরমে ছাদে কাজ করা যায় না। রড, সিমেন্ট, ইট– সব গরম হয়ে থাকে। কিন্তু কাজ তো বন্ধ রাখা যায় না। আমরা আছি বড় সমস্যায়।
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. রুবাইয়াত বিন করিম কালবেলাকে জানান, এ ধরনের গরমে শিশুরা খুব দ্রুত পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হয়। তাই অভিভাবকদের উচিত বেশি করে পানি খাওয়ানো এবং যতটা সম্ভব রোদ থেকে দূরে রাখা। দাবদাহ চলাকালে সবাইকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা প্রয়োজন ছাড়া রোদে বের হওয়ার দরকার নেই। পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা খাবার গ্রহণ ও ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান কালবেলাকে জানান, মৌসুমে বায়ু কম সক্রিয় থাকার কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত ফেনীতে ৩৭.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সাগরে মৌসুমি বায়ু মাঝারি অবস্থায় আছে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গপসাগরে একটি লঘুচাপের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দুই দিন এ তাপপ্রবাহ চলমান থাকবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন