বগুড়ার শেরপুর উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজিত দুর্নীতিবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপের পেছনে পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দেখা যাওয়ায় ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) শেরপুর পাইলট উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে এক দুর্নীতিবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নিমাই ঘোষ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক রোকনুজ্জামান এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহসভাপতি আইয়ুব আলী, সদস্য রামকৃষ্ণ দাস, নার্গিস আক্তার সাথী, মৌসুমী আক্তার, প্রতিভা রানীসহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
শিক্ষার্থীদের পুরস্কার বিতরণের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, প্রতিযোগিতায় ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপের পেছনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত একটি পোস্টার লাগানো রয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পতিত সরকারের কোনো প্রধানমন্ত্রীর ছবি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাখা যাবে না। এ নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ শেখকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রধান শিক্ষক নোটিশটি গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলাম না।’
তিনি সরকারি নির্দেশনা অমান্য করাকে ‘গুরুতর অন্যায়’ উল্লেখ করে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্ট প্রসেসিং শুরু করেছে। আমার মনে হয় প্রমাণিত হলে শাস্তি হওয়া উচিত, যেন অন্য কেউ আর সাহস না পায়।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইনবহির্ভূত প্রতীক বা ছবি থাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আশা করি, তদন্তের মাধ্যমে সঠিক সমাধান আসবে।’
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ শেখ বলেন, ‘শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ল্যাপটপটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয়নি। ওইদিন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় লক্ষ না করেই ল্যাপটপটি বের করা হয়। বিষয়টি নজরে আসার পরপরই ওই দিনই ছবিটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এটি আমার কোনো ইচ্ছাকৃত কাজ নয়, অসাবধানতাবশত ঘটেছে। আমি লিখিত জবাবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি।’
বগুড়া জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক রোকনুজ্জামান জানান, তিনি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন, তবে বিতর্কিত ছবি বিষয়ে জানা নেই।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দের মন্তব্য জানতে তার মোবাইফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনে আফরোজা এ ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যোগদানের পর থেকেই সবাইকে ওয়েবসাইট আপডেট করতে এবং আগের সব ছবি সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছি। বিতর্কিত ছবি সংবলিত ল্যাপটপ কীভাবে অনুষ্ঠানে এলো, সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের (প্রধান শিক্ষক) জবাব বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য করুন