প্রকৃতিতে জন্মানো এমন অনেক শাক রয়েছে যেগুলো পুষ্টিগুণে ভরপুর। এসব শাকে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং নানা রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধের উপাদান। প্রকৃতিতে জন্মানো এমনই এক পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ উপকারী উদ্ভিদ বুনো সবুজ নটেশাক।
পুষ্টিগুণে ভরপুর বুনো সবুজ নটেশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। এ শাকে রয়েছে ভিটামিন এ, সি এবং ভিটামিন কে। এ ছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন বি (বি৬, থায়ামিন, নিয়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড) এবং ফাইটোকেমিক্যাল। এসব উপাদান মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ থাকতে সহায়তা করে।
তবে প্রকৃতি বিষয়ে জনসচেতনতার অভাব ও পরিবেশ দূষণের ফলে উপকারী উদ্ভিদ বুনো সবুজ নটেশাক প্রকৃতি থেকে আধিক্য হারাচ্ছে। এক সময় গ্রামগঞ্জের মেঠোপথের দুপাশে, পরিত্যক্ত জায়গায়, বিভিন্ন জলাশয়ের পাড়ে ও পতিত জমিতে এ শাক প্রচুর পরিমাণে দেখা গেলেও দিন দিন এর উপস্থিতি কমে যাচ্ছে। যার ফলে মানুষ হারাতে বসেছে উপকারী উদ্ভিদ আর প্রকৃতি হারাতে বসেছে পরিবেশগত ভারসাম্য।
জানা গেছে, বুনো সবুজ নটেশাক আমারান্থ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রজাতি। এটি শাকজাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম অ্যামারান্থাস ভিরিডিস। সাধারণত এই শাক সরু আমরান্থ বা সবুজ আমারান্থ নামে পরিচিত। আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে এটিকে বুনো নটে, খুদুরি, খুড়িয়া, আম নটে, মারিশ ও বৈলবলি, নাটা ও গাইখুরা নামেও পরিচিত। এদের একাধিক প্রজাতি রয়েছে। সবুজ নটেশাক একটি বর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বর্ষাকালে জন্মে। এটি যে কোনো পরিবেশে দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি শাক হিসেবে খাওয়া হয়। খেতেও বেশ সুস্বাদু। শহুরে বাজারে এ শাক বেচাকেনা হয়।
এ শাক আমাদের দেশে চাষ না হলেও পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতসহ কয়েকটি দেশে এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করা হয়। গ্রীষ্ম-বর্ষায় এ উদ্ভিদের বংশবিস্তার বেশি হয়। তবে সারা বছরই এই গাছ জন্মে। এই গাছে ফুল শেষে ফল হয় এবং ফল থেকে বীজ হয়, আর এই বীজের মাধ্যমেই এরা বংশবিস্তার করে থাকে। বুনো সবুজ নটেশাক গাছে ফুল এলে এটি আর খাওয়ার যোগ্য থাকে না।
বুনো সবুজ নটেশাক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ভেষজ শাক। এ শাক নিয়মিত খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদযন্ত্র ভালো রাখে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যালসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখে। এটি নিয়মিত খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়া এই শাকে থাকা পুষ্টি উপাদান মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এ শাকে থাকা উপকারী উপাদান হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই শাক রক্তস্বল্পতা দূর করতে ও হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। মুখের রুচি ফেরাতে এই গাছের জুড়ি নেই। গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং রক্ত পরিশোধনে এই শাক বেশ উপকারী। এছাড়াও এ শাক আরও নানা রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধে সহায়ক।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জামাল হোসেন বলেন, সৃষ্টিকর্তার প্রতিটি সৃষ্টি একে অপরের পরিপূরক। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিটি সৃষ্টির গুরুত্ব রয়েছে। এ জন্য প্রতিটি সৃষ্টির প্রতি মানুষ হিসেবে আমাদের বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত।
তিনি বলেন, পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় প্রকৃতির ভূমিকা অপরিসীম। প্রকৃতিতে রয়েছে নানা ঔষধি গাছ। এসব গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি মানুষের নানা রোগে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। বুনো সবুজ নটেশাক এরকমই একটি উপকারী উদ্ভিদ। তবে প্রকৃতি থেকে উপকারী এই উদ্ভিদটির উপস্থিতি কমে আসছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, বুনো সবুজ নটেশাক একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উদ্ভিদ। এতে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। এ শাক মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নানা রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধে সহায়ক।
তিনি বলেন, তবে এ উদ্ভিদের সঠিক ব্যবহার নেই বলে অবহেলাজনিত কারণে প্রকৃতি থেকে উদ্ভিদটির আধিক্য কমে যাচ্ছে। উপকারী উদ্ভিদ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে বুনো সবুজ নটেশাকসহ অন্যান্য উপকারী গাছের পুষ্টিগুণ মানুষের জন্য সহজলভ্য হবে এবং উপকারী উদ্ভিদের পর্যাপ্ততা বৃদ্ধি পাবে।
ডা. সোহেল রানা বলেন, বুনো যে কোনো উদ্ভিদ খাওয়া বা ব্যবহারের আগে অবশ্যই সে উদ্ভিদ বিষয়ে যথেষ্ট জেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে উদ্ভিদবিশারদ বা ইউনানি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মন্তব্য করুন