কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩৭ পিএম
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

খাগড়াছড়িতে চলমান অস্থিরতা ও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ডাকসুর উদ্বেগ

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

খাগড়াছড়িতে চলমান অস্থিরতা ও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। বুধবার (১ অক্টোবর) ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, খাগড়াছড়িতে সম্প্রতি এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ এবং তৎপরবর্তী সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এরই মধ্যে শয়ন শীল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মামলার এজাহারে উল্লিখিত সময়ে গ্রেপ্তারকৃত শয়ন শীল খাগড়াছড়ি বাজারের বিভিন্ন দোকানে কেনাকাটা করছিলেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক ডা. জয়া চাকমা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ‘ওই ছাত্রীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। এমনকি সে ধর্ষণের শিকারও হয়নি।’ প্রতিবেদনে আলামত পরীক্ষার ১০টি সূচকের সবকটিই ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, পরস্পরবিরোধী তথ্য ও অসংগতির কারণে ঘটনাটি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এমতাবস্থায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) জোর দাবি জানাচ্ছে যে, স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে যদি ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হয়, তবে অপরাধীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে, যদি প্রমাণিত হয় যে ঘটনাটি সাজানো বা পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়েছে, তবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিয়মতান্ত্রিক ও আইনানুগ প্রক্রিয়া না মেনে সুসংগঠিতভাবে অবরোধ, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট, ঘরবাড়ি পোড়ানো, পর্যটক হয়রানি এবং একে জাতিগত সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া দুঃখজনক। পরে চলমান অস্থিরতা ও সংঘাতে আথুই মারমা, আথ্রাউ মারমা এবং তৈইচিং মারমা নামে তিনজন নাগরিক নিহত এবং বেশ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। ডাকসু পার্বত্য অঞ্চলে সংঘটিত হামলা, সশস্ত্র সংঘাত ও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একই সঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে। বিভিন্ন স্থানে সুসংগঠিত হামলা ও তিন নাগরিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের যথাযথ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ধর্ষণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো অপরাধীর বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক ও আইনানুগভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পরিবর্তে বিষয়টিকে অবরোধ ও জাতিগত সংঘাতে রূপ দেওয়ার প্রবণতা সমীচীন নয়। পার্বত্য অঞ্চলে নির্দিষ্ট ঘটনাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সমাধান না করা, পার্বত্য অঞ্চলের বিদ্যমান সশস্ত্র গ্রুপগুলোর ষড়যন্ত্রকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হওয়া এবং নানা মহলের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণের ফলে সমাধানের পথ আরও বাধাগ্রস্ত হয়। এর পরিণতিতে প্রায়ই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, ভুক্তভোগী হন এলাকার চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বাঙালিসহ বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে ন্যায়বিচারের পথও গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়।

ফরহাদের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের গুরুতর অভিযোগকে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান করতে ব্যর্থ হওয়া এবং অপতৎপরতাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে না পারা, বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বাঙালিসহ সকল জনগোষ্ঠীর বেসামরিক নাগরিকদের যথাযথ নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে না পারা মূলত প্রশাসনের সীমাহীন অদক্ষতা ও দায়বদ্ধতার অভাবকে প্রকাশ করে। প্রশাসনের এই ব্যর্থতা এবং অপতৎপরতাকারীদের উস্কানি—উভয়ই দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন এবং পার্বত্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

এতে বলা হয়, ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর অপতৎপরতা ও উস্কানি এখনো বিদ্যমান। এই অপতৎপরতা ও উস্কানি বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করছে এবং জাতিগত সংঘাতে রূপান্তরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, দেশের এই সংকটময় সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-মতের একাধিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পাহাড়ে ‘গণহত্যার’ আহ্বান জানাচ্ছেন। আমরা এ ধরনের জেনোসাইডাল মনোভাবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, লক্ষণীয় বিষয় হলো, একাধিক সশস্ত্র ও সন্ত্রাসী গ্রুপের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের সফল বহিঃপ্রকাশ বাংলাদেশের এক-দশমাংশ অঞ্চল তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ফেলে। এবং এই অঞ্চলে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখিয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমেই শহীদ আবু সাঈদ, রিয়া গোপ এবং অন্যদের ত্যাগের যথার্থ মর্যাদা দেওয়া সম্ভব হবে।

আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই—বাংলাদেশ কোনো একক জাতিগোষ্ঠীর নয়, বরং সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও মর্যাদার দেশ। তাই দেশের প্রতিটি প্রান্তে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা এবং নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সর্দার দুলালসহ আন্তঃজেলার ১৩ ডাকাত গ্রেপ্তার

হবিগঞ্জে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০

আ.লীগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে কী বললেন আইন উপদেষ্টা

বোরকা পরে হাসপাতালে পরীমনি!

হার্দিকের আধিপত্য ভাঙলেন পাক তারকা, বিশ্বরেকর্ড অভিষেকের

রংপুর বিভাগের সব পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা সন্তোষজনক : ডিআইজি আমিনুল

‘আ.লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কোনো কথাই বলেননি প্রধান উপদেষ্টা’ 

নারায়ণগঞ্জে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে নজরুল ইসলাম আজাদ

পাখিরা কেন বৈদ্যুতিক তারে বসতে পছন্দ করে, কেন তারা শক খায় না?

৫৪ ঘণ্টা সাপভর্তি কুয়োয়, ‘অলৌকিকভাবে’ প্রাণে বেঁচে ফিরলেন নারী!

১০

‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নির্বাচনের আগে আইনি ভিত্তি বাধ্যতামূলক’

১১

আবারও বিচার নিয়ে আইসিসির দ্বারস্থ ভারত, নেপথ্যে যে কারণ

১২

উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা, কী হতে যাচ্ছে?

১৩

ছিনতাইকারীদের হাতে স্কুলশিক্ষার্থী খুন / ‘জীবনের চাইতেও কি রিকশার মূল্য বেশি’

১৪

গাজার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা

১৫

বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকেই ভোট দিতে পারবেন প্রবাসীরা : সিইসি

১৬

চলে গেলেন খলনায়ক শাহজাদ ভোলা

১৭

ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সাবধান হোন ৭ সহজ উপায়ে

১৮

হৃদয় ভালো রাখতে নিয়মিত খান এই ৫ সবজি

১৯

বৃষ্টি আরও কতদিন, জানাল আবহাওয়া অফিস

২০
X