আজকের ব্যস্ত জীবনে আমরা অনেকেই একা হয়ে যাচ্ছি—চাইলেও সময়, সম্পর্ক বা যোগাযোগের জায়গায় দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। কেউ হয়তো কাজের চাপে বন্ধুদের সময় দিতে পারছেন না, আবার কেউ পরিবার থেকে দূরে একা থাকছেন।
এমন একাকিত্ব শুধু মন খারাপই করে না, শরীর, বিশেষ করে হৃদয়ের ওপরও ফেলতে পারে মারাত্মক প্রভাব। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে একা থাকা বা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে একটু সচেতনতা আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে।
প্রথমেই বোঝা দরকার সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কী? সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মানে শুধু একা থাকা নয়—বরং পরিবারের সদস্য, বন্ধু বা সমাজের সঙ্গে নিয়মিত ও মানসম্পন্ন যোগাযোগ না থাকা। মানে, আপনার পাশে কেউ না থাকলে বা কারও সঙ্গে আপনার মনের কথাগুলো ভাগাভাগি করার সুযোগ না থাকলে, আপনি ‘সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন’ বলে বিবেচিত হতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সময় একা বা বিচ্ছিন্নভাবে থাকলে শরীরে মানসিক চাপ তৈরি হয়। তখন কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন নামে দুই ধরনের স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফল:
- রক্তচাপ বেড়ে যায়
- হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়
- রক্তনালিতে প্রদাহ হয়
এসব পরিবর্তন ধীরে ধীরে হার্টের ওপর চাপ বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্বের প্রভাব ধূমপান, স্থূলতা বা ব্যায়ামের অভাবের মতোই মারাত্মক হতে পারে।
অসুস্থ স্বাস্থ্যচর্চা: একাকিত্বে ভোগা মানুষ অনেক সময় ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করেন না, ব্যায়ামও বাদ পড়ে।
মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হয়: একা থাকলে বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়, যা হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
সাহায্যের অভাব: অসুস্থ হলে পাশে কেউ না থাকলে সাহায্য পাওয়া কঠিন হয়। ভালো সম্পর্ক শুধু মন ভালো রাখে না, রোগমুক্তির পথও সহজ করে।
- বয়স্ক যারা একা থাকেন বা যাদের কাছের কেউ নেই
- যাদের সামাজিক মেলামেশা কম
তরুণরাও ঝুঁকিমুক্ত নন—কাজের চাপ, জায়গা পরিবর্তন বা ভার্চুয়াল জগতে ডুবে থাকার কারণে বাস্তব জীবনে অনেকেই একা হয়ে পড়েন।
মানুষের সঙ্গে যুক্ত থাকুন: প্রতিদিন পরিবারের সদস্য বা বন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথা বলুন, দেখা করার চেষ্টা করুন।
সামাজিক কাজে অংশ নিন: স্বেচ্ছাসেবী কাজ, কমিউনিটি ক্লাব বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিলে মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে।
নিজেকে ব্যস্ত রাখুন: শখের কাজ করুন—যেমন বই পড়া, গান শোনা, ছবি আঁকা বা হাঁটতে যাওয়া।
মন ভালো না থাকলে চিকিৎসকের কাছে যান: লজ্জা না পেয়ে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের পরামর্শ নিন।
শরীরের যত্ন যেমন জরুরি, মনের যত্নও ততটাই দরকার। সামাজিকভাবে সংযুক্ত থাকা শুধু আপনাকে ভালো রাখে না, হৃদয়কেও সুস্থ রাখে। তাই সময় থাকতে একাকিত্বকে গুরুত্ব দিন এবং প্রয়োজন হলে সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন