বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মামুরশাহী গ্রামের বাসিন্দা রেখা বেগম। বাড়িতে পালন করা একটি গাভী থেকে দুধ হয় ৮ থেকে ১০ লিটার। প্রতিদিন দুধ বিক্রি করতে যান পৌর শহরের শিশুপার্ক বাজারে। প্রতিদিন তার মতো ছোট ছোট খামারিরা সেখানে যান তাদের গাভীর দুধ নিয়ে। কোনো ঝামেলা ছাড়াই মাত্র ৬০ মিনিটেই শেষ হয়ে যায় এই দুধের বাজার।
শতাব্দী প্রাচীন দইয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে খাঁটি দুধের ঘনিষ্ট সম্পর্ক। এলাকার দই প্রস্তুতকারকরা স্থানীয় বাজার থেকেই তাদের প্রয়োজনীয় দুধ সংগ্রহ করেন। আগে সকাল বাজার ও বারোদুয়ারী এলাকায় দুধ কেনাবেচা হতো। কিন্তু করোনা মহামারির সময় স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে বাজারটি স্থান পায় শেরপুর পৌরসভার শিশু পার্কে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারটি মূলত শেরপুর, ধুনট, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, শাজাহানপুর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ গ্রামের কৃষক ও খামারিদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য বিক্রয় কেন্দ্র। প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক খামারি সেখানে গিয়ে তাদের গরুর দুধ বিক্রি করেন। এক ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার লিটার দুধ বিক্রি হয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ লাখ টাকার কেনাবেচা হয়।
রেখা বেগমের মতো আরেক বিক্রেতা বোয়ালকান্দি গ্রামের তোতা মোল্লা। তিনি প্রতিদিন সকালে তার বাড়ির আশপাশের ৫০ থেকে ৬০ বাড়ির দুধ সংগ্রহ করে এই বাজারে নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, এখানে ভালো মানের দুধ বিক্রি হয়। তাই ক্রেতারা আগে থেকেই সমবেত হন। আমরা আসা মাত্রই এক ঘণ্টার মধ্যে সব শেষ হয়ে যায়।
আরেক বিক্রেতা ধরমোকাম গ্রামের আবু হোরায়রা বলেন, আমি প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ লিটার দুধ নিয়ে আসি। দই মিষ্টির ব্যবসায়ীরাই প্রধানত এখানকার ক্রেতা। আমার পরিবার এই দুধ বিক্রির মুনাফার ওপর নির্ভরশীল।
সারা দেশে বিখ্যাত বগুড়ার দইয়ের মূল যোগানদাতা শেরপুরের দই বিক্রেতারা। এখান থেকে প্রতিদিন শত শত মণ দই দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তাদের উন্নতমানের দইয়ের মূল উপাদান এই বাজারের দুধ।
এই বাজারের নিয়মিত ক্রেতা ও দই মিষ্টি ব্যবসায়ী আনন্দ ঘোষ বলেন, এখানকার বিক্রেতারা গ্রামের ছোট ছোট খামাররির কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে বাজারে আনেন। তাদের গরুগুলো প্রাকৃতিক ঘাস ও খড় খায়। এজন্য দুধও ভালো হয়।
আরেক দই ব্যবসায়ী মাজেদুল ইসলাম চুন্নু বলেন, শেরপুরের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও খাঁটি দুধের কারণেই দই মিষ্টি সুস্বাদু হয়। এই বাজারের সব দুধই ভালো। আমরা অনেক সময় সেগুলো ল্যাক্টোমিটার দিয়ে পরীক্ষা করে থাকি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজমীর রহমান জানান, প্রান্তিক পর্যায়ে শেরপুর উপজেলায় প্রায় সাড়ে সাত হাজার খামার রয়েছে। প্রতিটি খামারে গড়ে ১০ থেকে ২০টি গাভী পালন করা হয়। শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং ভ্যাকসিন প্রদানসহ সকল প্রকার সেবা প্রদান করা হয়। এর ফলে, প্রতিটি গাভী অধিক উৎপাদনশীল হওয়ায় গড়ে ১০ থেকে ২০ লিটার দুধ উৎপাদন করে। বেশিরভাগ খামারি তাদের দুধ পৌর শহরের শিশু পার্কে দুপুরে বিক্রি করেন। বাজার অনুযায়ী দুধের দাম ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এভাবে প্রতিদিন গড়ে ১৮ থেকে ৩০ লাখ টাকার দুধ কেনাবেচা হয়।
মন্তব্য করুন