বরগুনায় গর্ভধারিণী মাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে ছেলের দায়ের করা মামলায় জন্মদাতা পিতা, সৎমা ও বোনের স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে এ রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) দুপুরে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মাজেদ তালুকদারের ছেলে কবির তালুকদার (৫৯), তার দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচি বেগম (৫০) এবং জামাতা সুজন (৩৫)। সুজন একই গ্রামের মোস্তফার ছেলে।
মামলার বিবরণী সূত্রে জানা গেছে, বাদী হেলাল তালুকদারের মা নিহত মহিমা বেগমের সঙ্গে প্রায় ৩০ বছর আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন অভিযুক্ত কবির তালুকদার। দাম্পত্য জীবনে যৌতুকের দাবিতে কবির তালুকদার প্রায়ই স্ত্রী মহিমা বেগমকে নির্যাতন করতেন।
পরে কবির তালুকদার তার মেয়ের শাশুড়ি এলাচি বেগমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি জানাজানি হলে হেলালের বোন রেখা বেগম মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন। কয়েক বছর পর কবির তালুকদার সেই শাশুড়ি এলাচি বেগমকেই দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ বিয়ের পর থেকে পারিবারিক কলহ আরও বাড়ে।
২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর হেলাল তালুকদারকে কৌশলে শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে কবির তালুকদার, এলাচি বেগম ও জামাতা সুজন বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মহিমা বেগমকে হত্যা করেন। পরে ঘটনাটিকে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করেন তারা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে ছেলে হেলাল তালুকদার বাদী হয়ে পাথরঘাটা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রায় ঘোষণার পর বাদী হেলাল তালুকদার বলেন, আমি আমার মায়ের হত্যার বিচার পেয়েছি। আদালতের রায়ে আমি সন্তুষ্ট। এ সময় আইন ও বিচার বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হোসনেয়ারা শিপু বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডটি প্রমাণিত হয়েছে। আদালত যথাযথ রায় দিয়েছেন। এ রায়ের মাধ্যমে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে বলে আমি মনেকরি।
প্রধান আসামি কবির তালুকদারের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম তরু ফরাজী। অন্য দুই আসামি এলাচি বেগম ও সুজনের পক্ষে ছিলেন অ্যাড. ইমরান হোসেন।
মন্তব্য করুন